মানিক মিয়ার রাজনৈতিক সংগ্রাম | মানিক আঠারবাড়ী বিএনপি
বাংলাদেশের রাজনীতি শুধু ক্ষমতার পালাবদলের কাহিনি নয়, এর ভেতর লুকিয়ে আছে হাজারো কর্মীর রক্ত-ঘাম, ত্যাগ আর নির্যাতনের গল্প। তেমনই এক নাম মানিক মিয়া, বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ী ইউনিয়নে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর রাজনীতির সাথে যুক্ত। তার ২৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনের মধ্যে ১৮ বছর কেটেছে নির্যাতন, মামলা, হামলা আর আর্থিক ক্ষতির ভেতর দিয়ে। এই প্রতিবেদনে আমি মানিক মিয়ার রাজনৈতিক জীবনের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করলাম।
রাজনৈতিক জীবনের শুরু ও নির্যাতন
বিএনপি করার অপরাধে প্রথম দিনেই সেনাবাহিনী তাকে ধরে পা ভেঙে দেয়। ভাঙা পা নিয়ে হাঁটু আর হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে তাকে টয়লেটে যেতে হয়েছিল। তার এই কষ্টের সাক্ষী হয়ে আছেন এলাকার অনেকেই।
মৃত্যুর মুখোমুখি অভিজ্ঞতা
আটকের দ্বিতীয় রাতে সেনারা জানিয়ে দেয় “আজ তুই ক্রসফায়ার হবি।” চোখ বেঁধে, ওজু করিয়ে, থুতনির নিচে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি চালানো হয়। কয়েক সেকেন্ড তিনি ভেবেছিলেন, জীবন শেষ হয়ে গেছে। পরে বুঝলেন খালি পিস্তল দিয়ে ভয় দেখানো হয়েছিল। তিনি বিশ্বাস করেন, সেই দিন বেঁচে যাওয়া শুধুই আল্লাহর রহমত।
মামলার বোঝা
মানিক মিয়ার রাজনৈতিক জীবনে একের পর এক মিথ্যা মামলা চাপানো হয়েছে।
* মার্ডার মামলা
* ডাকাতি মামলা
* চাঁদাবাজি মামলা
* বিস্ফোরক মামলা
সব মিলিয়ে প্রায় ২০-২২টি মামলা মোকাবিলা করতে হয়েছে তাকে শুধু বিএনপি করার কারণে।
সম্পদ হারানো ও হামলার শিকার
বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, ঘরের মালামাল লুট করা হয়েছে, ব্যক্তিগত পুকুর দখল করে নেওয়া হয়েছে। এমনকি রেলস্টেশনের দোকানও ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত পান, রক্ত ঝরেছিল রাজপথেই।
আর্থিক ক্ষতি সংসারের দুরবস্থা
রাজনৈতিক হয়রানির কারণে বাজারের দোকান ও প্রায় ৩০ শতাংশ জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা। অসংখ্য দিন তাকে না খেয়ে থাকতে হয়েছে, আশ্রয় নিতে হয়েছে অন্যের রান্নাঘরে।
তার সন্তানদের বয়স এখন ১৫, ১৬ ও ১২ বছর। অথচ তিনি তাদের সাথে জীবনে মোটে ১২০ দিনের মতো সময় কাটাতে পেরেছেন। রাজনৈতিক নির্যাতনের কারণে পারিবারিক সম্পর্কেও এসেছে দূরত্ব।
সংগ্রামী রাজনীতিবিদ
১৮ বছরের দীর্ঘ সময় তিনি শুধু রাজপথেই কাটাননি, কাটিয়েছেন অগণিত রাত জেলখানায়, মিথ্যা মামলার ভয়ে পলাতক জীবনযাপন করে। নিজের ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, সম্পদ হারিয়েছেন, এমনকি নিজের সন্তানদের সাথেও কাটাতে পারেননি জীবনের মূল্যবান সময়। তবুও তিনি হার মানেননি। আজও তিনি দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন বিএনপির পতাকা হাতে। তার চোখে রাজনীতি মানে ক্ষমতা নয়, বরং জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। আঠারবাড়ীর মানিক মিয়ার গল্প বাংলাদেশের রাজনীতির বাস্তব চিত্র। তিনি শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন নির্যাতিত বিএনপি কর্মীদের।