পরিবেশ কি | পরিবেশ কাকে বলে | সামাজিক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি
মানুষের অস্তিত্ব, সভ্যতার বিকাশ এবং প্রতিটি প্রাণীর টিকে থাকার মূল ভিত্তি হলো পরিবেশ। পরিবেশ আমাদের চারপাশের বাতাস, পানি, মাটি, উদ্ভিদ, প্রাণী এবং জলবায়ুর সমন্বয়ে গঠিত একটি জটিল ব্যবস্থা। প্রকৃতির এই ভারসাম্যপূর্ণ সমাহার পৃথিবীতে জীবনধারার ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। কিন্তু আধুনিক যুগে প্রযুক্তি ও শিল্প বিপ্লবের অগ্রযাত্রায় মানুষ যেমন উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে, তেমনি পরিবেশের ওপর চাপও বেড়েছে বহুগুণ। বন উজাড়, দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস আমাদের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য এক গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিবেশ শুধু মানবজীবনের জন্য নয়, পৃথিবীর প্রতিটি জীবের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুস্থ পরিবেশ আমাদেরকে নির্মল বাতাস, বিশুদ্ধ পানি, নিরাপদ খাদ্য, আরামদায়ক আবহাওয়া এবং সুস্থ জীবনযাপনের নিশ্চয়তা প্রদান করে। অথচ আমরা নিজের স্বার্থে সেই পরিবেশকেই নষ্ট করছি, যার ওপর নির্ভর করে আমাদের অস্তিত্ব। তাই পরিবেশ সংরক্ষণ এখন আর কেবল গবেষক বা পরিবেশবিদদের আলোচনার বিষয় নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক জরুরি চ্যালেঞ্জ।
সচেতনতা, দায়িত্বশীলতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা যদি পরিবেশ রক্ষা করতে সক্ষম হই, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর, নিরাপদ এবং বাসযোগ্য পৃথিবী উপহার দেওয়া সম্ভব। পরিবেশকে রক্ষা করা মানে কেবল প্রকৃতিকে টিকিয়ে রাখা নয়, বরং মানবজাতির অস্তিত্বকেও টিকিয়ে রাখা।
পরিবেশ কি
পরিবেশ
পরিবেশ কাকে বলে
পরিবেশ দূষণ কাকে বলে
সামাজিক পরিবেশ কাকে বলে
প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে
বিশ্ব পরিবেশ দিবস কবে
পরিবেশ দূষণের ১০টি কারণ
পরিবেশ সংরক্ষণের ১০টি উপায়
সামাজিক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি
পরিবেশ সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ পরিবেশ কী?
উত্তরঃ পরিবেশ হলো আমাদের চারপাশের সবকিছু—বাতাস, পানি, মাটি, গাছপালা, প্রাণী ও মানুষ—যা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত।
প্রশ্নঃ প্রাকৃতিক পরিবেশ কী?
উত্তরঃ যে পরিবেশ প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মে তৈরি হয় যেমন বন, নদী, পাহাড়, সমুদ্র, বায়ু ইত্যাদি তাকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে।
প্রশ্নঃ কৃত্রিম পরিবেশ কী?
উত্তরঃ মানুষের দ্বারা গড়ে ওঠা পরিবেশ যেমন শহর, রাস্তা, বাঁধ, কারখানা, ভবন ইত্যাদি হলো কৃত্রিম পরিবেশ।
প্রশ্নঃ জীববৈচিত্র্য কী?
উত্তরঃ পৃথিবীতে বিদ্যমান সব প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈচিত্র্যকেই জীববৈচিত্র্য বলে।
প্রশ্নঃ পরিবেশের প্রধান উপাদান কী কী?
উত্তরঃ বায়ু, পানি, মাটি, উদ্ভিদ, প্রাণী এবং মানুষ হলো পরিবেশের প্রধান উপাদান।
প্রশ্নঃ পরিবেশ দূষণ কী?
উত্তরঃ মানুষের কার্যকলাপ বা প্রাকৃতিক কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়াকে পরিবেশ দূষণ বলে।
প্রশ্নঃ বায়ুদূষণ কী?
উত্তরঃ ক্ষতিকর ধোঁয়া, গ্যাস ও কণার মিশ্রণে বাতাস অস্বাস্থ্যকর হয়ে গেলে সেটি বায়ুদূষণ।
প্রশ্নঃ জলদূষণ কী?
উত্তরঃ শিল্পবর্জ্য, নর্দমা, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক পানিতে মিশে গেলে তাকে জলদূষণ বলে।
প্রশ্নঃ শব্দদূষণ কী?
উত্তরঃ অতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত শব্দ উৎপন্ন হলে তাকে শব্দদূষণ বলে।
প্রশ্নঃ মাটিদূষণ কী?
উত্তরঃ ক্ষতিকর রাসায়নিক, প্লাস্টিক ও শিল্পবর্জ্যে মাটির প্রাকৃতিক গুণ নষ্ট হওয়াকে মাটিদূষণ বলে।
প্রশ্নঃ পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ কী?
উত্তরঃ শিল্পায়ন, যানবাহনের ধোঁয়া, বন উজাড়, অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার, প্লাস্টিক বর্জ্য ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি।
প্রশ্নঃ গ্লোবাল ওয়ার্মিং কী?
উত্তরঃ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়াকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলে।
প্রশ্নঃ গ্রীনহাউস প্রভাব কী?
উত্তরঃ বায়ুমণ্ডলে গ্রীনহাউস গ্যাস জমে সূর্যের তাপ আটকে রাখা প্রক্রিয়াকে গ্রীনহাউস প্রভাব বলে।
প্রশ্নঃ জলবায়ু পরিবর্তন কী?
উত্তরঃ দীর্ঘ সময় ধরে আবহাওয়ার স্বাভাবিক ধরণ পরিবর্তিত হওয়াকে জলবায়ু পরিবর্তন বলে।
প্রশ্নঃ বন উজাড় কেন ক্ষতিকর?
উত্তরঃ বন উজাড় হলে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেড়ে যায় এবং জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্ট হয়।
প্রশ্নঃ বায়ু কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তরঃ বায়ু ছাড়া জীবিত প্রাণী বাঁচতে পারে না। এটি শ্বাস-প্রশ্বাস, দহন ও জলবায়ুর ভারসাম্যে সহায়তা করে।
প্রশ্নঃ জল কেন জীবন?
উত্তরঃ জল ছাড়া জীবন কল্পনাই করা যায় না। পানীয়, কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য সবকিছুর জন্য পানি অপরিহার্য।
প্রশ্নঃ মাটি কেন পরিবেশের মূল ভিত্তি?
উত্তরঃ মাটি খাদ্য উৎপাদনের প্রধান উৎস, জীবজগতের আবাসস্থল এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী।
প্রশ্নঃ ওজোন স্তর কী?
উত্তরঃ বায়ুমণ্ডলের একটি স্তর যা সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে।
প্রশ্নঃ ওজোন স্তর ক্ষয় হলে কী হয়?
উত্তরঃ ওজোন স্তর ক্ষয় হলে ত্বকের ক্যান্সার, চোখের সমস্যা, জলবায়ুর পরিবর্তন ও কৃষি উৎপাদন কমে যায়।
প্রশ্নঃ প্লাস্টিক দূষণ কী?
উত্তরঃ অব্যবহৃত প্লাস্টিক মাটি, পানি ও প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর হয়ে পড়লে তাকে প্লাস্টিক দূষণ বলে।
প্রশ্নঃ বনায়ন কেন প্রয়োজন?
উত্তরঃ বনায়ন বায়ু পরিশোধন করে, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে এবং জলবায়ুর ভারসাম্য বজায় রাখে।
প্রশ্নঃ জলাশয় কেন রক্ষা করা জরুরি?
উত্তরঃ জলাশয় মাছ, প্রাণী ও মানুষের খাদ্য ও জীবিকার উৎস এবং জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
প্রশ্নঃ টেকসই উন্নয়ন কী?
উত্তরঃ বর্তমান প্রজন্মের প্রয়োজন মিটিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা নষ্ট না করাকে টেকসই উন্নয়ন বলে।
প্রশ্নঃ পরিবেশ সংরক্ষণ কী?
উত্তরঃ প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখা এবং পরিবেশ দূষণ রোধ করাকে পরিবেশ সংরক্ষণ বলে।
প্রশ্নঃ পুনঃব্যবহারযোগ্য জিনিস কী?
উত্তরঃ যেসব জিনিস পুনরায় ব্যবহার করা যায় যেমন কাচ, কাগজ, ধাতু ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ পুনঃনবীকরণযোগ্য জ্বালানি কী?
উত্তরঃ যেসব জ্বালানি বারবার ব্যবহার করা যায় যেমন সূর্যশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ।
প্রশ্নঃ অপুনঃনবীকরণযোগ্য জ্বালানি কী?
উত্তরঃ যেসব জ্বালানি একবার ব্যবহার করলে পুনরায় পাওয়া যায় না যেমন কয়লা, গ্যাস, তেল।
প্রশ্নঃ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কী কী?
উত্তরঃ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা, খাদ্য সংকট ও রোগব্যাধি বৃদ্ধি।
প্রশ্নঃ শব্দদূষণের ক্ষতি কী কী?
উত্তরঃ কানের সমস্যা, মানসিক চাপ, হৃদরোগ, ঘুমের ব্যাঘাত ও কর্মক্ষমতা হ্রাস।
প্রশ্নঃ পরিবেশ রক্ষায় ব্যক্তিগত ভূমিকা কী হতে পারে?
উত্তরঃ গাছ লাগানো, প্লাস্টিক কম ব্যবহার, পানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়, বর্জ্য আলাদা করা ও সচেতনতা বৃদ্ধি।
প্রশ্নঃ পরিবেশ রক্ষায় সরকারের ভূমিকা কী?
উত্তরঃ আইন প্রণয়ন, বনায়ন প্রকল্প, শিল্পবর্জ্য নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি প্রচলন ও সচেতনতা কর্মসূচি।
প্রশ্নঃ নদী দূষণের কারণ কী?
উত্তরঃ শিল্পবর্জ্য, নর্দমা, প্লাস্টিক বর্জ্য, জাহাজের তেল, অতিরিক্ত মাছ ধরা।
প্রশ্নঃ মরুকরণ কী?
উত্তরঃ চাষযোগ্য জমি ধীরে ধীরে অনুর্বর হয়ে মরুভূমিতে পরিণত হওয়াকে মরুকরণ বলে।
প্রশ্নঃ অম্লবৃষ্টি কী?
উত্তরঃ বায়ুমণ্ডলে সালফার ও নাইট্রোজেনের অক্সাইড মিশে বৃষ্টির পানি অম্লীয় হয়ে পড়াকে অম্লবৃষ্টি বলে।
প্রশ্নঃ অম্লবৃষ্টির ক্ষতি কী কী?
উত্তরঃ গাছপালা মরে যায়, মাটি ও পানির গুণ নষ্ট হয়, স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রশ্নঃ পরিবেশ সচেতনতা কেন জরুরি?
উত্তরঃ মানুষকে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব বুঝিয়ে টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করাই পরিবেশ সচেতনতার মূল উদ্দেশ্য।
প্রশ্নঃ নবায়নযোগ্য শক্তি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তরঃ এটি পরিবেশ দূষণ কমায়, দীর্ঘমেয়াদে টেকসই এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ।
প্রশ্নঃ শিল্পায়ন পরিবেশের ক্ষতি করে কেন?
উত্তরঃ কারণ শিল্প থেকে বর্জ্য, ধোঁয়া ও রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়ে পরিবেশ দূষিত হয়।
প্রশ্নঃ গাছপালা পরিবেশের জন্য কেন প্রয়োজনীয়?
উত্তরঃ গাছপালা অক্সিজেন সরবরাহ করে, কার্বন শোষণ করে, মাটি ধরে রাখে এবং জীবজগতের খাদ্য সরবরাহ করে।
প্রশ্নঃ পরিবেশ ধ্বংসের ফলে কী হতে পারে?
উত্তরঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি, খাদ্য সংকট, স্বাস্থ্য সমস্যা ও জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তি।
প্রশ্নঃ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন প্রয়োজন?
উত্তরঃ বন্যপ্রাণী পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে।
প্রশ্নঃ পরিবেশ বান্ধব জীবনধারা কী?
উত্তরঃ অপচয় কমানো, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার, পুনঃব্যবহারযোগ্য জিনিস ব্যবহার ও প্রকৃতির প্রতি যত্নবান হওয়াই পরিবেশ বান্ধব জীবনধারা।
প্রশ্নঃ কার্বন নিঃসরণ কী?
উত্তরঃ জ্বালানি পোড়ানোর ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে ছাড়াকে কার্বন নিঃসরণ বলে।
প্রশ্নঃ কার্বন নিঃসরণ কমানোর উপায় কী?
উত্তরঃ বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহার, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার, গাছ লাগানো, প্লাস্টিক কমানো।
প্রশ্নঃ পরিবেশ দিবস কবে পালিত হয়?
উত্তরঃ প্রতি বছর ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়।
প্রশ্নঃ বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের উদ্দেশ্য কী?
উত্তরঃ মানুষকে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করা এবং কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশে পরিবেশের প্রধান সমস্যা কী?
উত্তরঃ বায়ুদূষণ, নদী দূষণ, প্লাস্টিক বর্জ্য, বন উজাড়, শব্দদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।
প্রশ্নঃ আমাদের কী করতে হবে পরিবেশ রক্ষায়?
উত্তরঃ সচেতন হতে হবে, পরিবেশবান্ধব জীবনধারা গ্রহণ করতে হবে, বৃক্ষরোপণ করতে হবে এবং সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব নিতে হবে।