অটল বিহারী বাজপেয়ী জীবনী | প্রশ্ন উত্তর সাধারণ জ্ঞান
অটল বিহারী বাজপেয়ী ছিলেন ভারতের এক অসাধারণ রাজনীতিবিদ, কবি, দেশপ্রেমিক ও প্রজ্ঞাবান নেতা।
তিনি ভারতের দশম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং তাঁর বুদ্ধি, বাগ্মিতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।
অটলজি ছিলেন এমন একজন নেতা, যিনি বিরোধীদের কাছেও শ্রদ্ধেয় ছিলেন।
অটল বিহারী বাজপেয়ী জীবনী
অটল বিহারী বাজপেয়ী ১৯২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের গ্বালিয়রে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতা ছিলেন কৃষ্ণ বিহারী বাজপেয়ী, যিনি একজন শিক্ষক ছিলেন, এবং মাতা ছিলেন কৃষ্ণ দেবী।
ছোটবেলা থেকেই অটলজি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী, অধ্যবসায়ী ও দেশপ্রেমিক।
অটল বিহারী বাজপেয়ী শিক্ষা জীবন
অটল বিহারী বাজপেয়ী গ্বালিয়র ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং পরবর্তীতে কানপুরের ডি.এ.ভি. কলেজ থেকে রাজনৈতিক বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS)-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যা তাঁর রাজনৈতিক জীবনের ভিত্তি স্থাপন করে।
অটল বিহারী বাজপেয়ী ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ
অটল বিহারী বাজপেয়ী ছিলেন একজন অসাধারণ বক্তা ও কবি।
তিনি সর্বদা ভারতীয় সংস্কৃতি, ধর্মনিরপেক্ষতা ও মানবতার পক্ষে ছিলেন।
তাঁর বিখ্যাত উক্তি —
“আমি রাজনীতি করি না ক্ষমতার জন্য, করি দেশের সেবার জন্য।”
তিনি ছিলেন এমন এক নেতা, যিনি দলমত নির্বিশেষে সকলের শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন।
অটল বিহারী বাজপেয়ী সাহিত্য ও কবিতা
অটল বিহারী বাজপেয়ী ছিলেন একজন দক্ষ কবি।
তাঁর কিছু জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ হলো –
মেরি ইক্কাওয়ান কবিতায়ন
নয়ি দিশা
আমর বালিদান
গাথা
তাঁর কবিতায় দেশপ্রেম, মানবতা ও জীবনের দর্শন প্রকাশ পেয়েছে।
অটল বিহারী বাজপেয়ী রাজনৈতিক জীবন
অটল বিহারী বাজপেয়ীর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে।
তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
স্বাধীনতার পর তিনি ভারতীয় জনসংঘ-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হন।
১৯৫৭ সালে তিনি প্রথমবারের মতো লোকসভায় নির্বাচিত হন।
১৯৮০ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি ছিলেন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম সভাপতি।
অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব
অটল বিহারী বাজপেয়ী তিনবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন
-
প্রথমবার ১৯৯৬ সালে মাত্র ১৩ দিন
-
দ্বিতীয়বার ১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত
-
তৃতীয়বার ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত সম্পূর্ণ মেয়াদে
তাঁর নেতৃত্বে ভারত উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন, কূটনৈতিক সাফল্য এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অর্জন করে।
অটল বিহারী বাজপেয়ী সাফল্যসমূহ
অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বে বেশ কিছু ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ও সাফল্য অর্জিত হয়, যেমনঃ
-
পরমাণু পরীক্ষা (Pokhran-II): ১৯৯৮ সালে ভারত সফলভাবে পাঁচটি পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়, যা ভারতের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা প্রমাণ করে।
-
স্বর্ণিম চতুর্ভুজ প্রকল্প (Golden Quadrilateral): ভারতের অন্যতম বৃহৎ মহাসড়ক প্রকল্প, যা দেশের চারটি মহানগরকে সংযুক্ত করে।
-
লাহোর বাস যাত্রা: পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি স্থাপনের জন্য তিনি ১৯৯৯ সালে ঐতিহাসিকভাবে লাহোর সফর করেন।
-
অর্থনৈতিক সংস্কার: বাজপেয়ী সরকারের সময় ভারত অর্থনৈতিকভাবে অনেক স্থিতিশীলতা লাভ করে এবং বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।
পুরস্কার ও সম্মাননা
অটল বিহারী বাজপেয়ী ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ভারতরত্ন লাভ করেন ২০১৫ সালে।
এর আগে তিনি পেয়েছিলেন –
-
পদ্ম বিভূষণ (১৯৯২)
-
লোকপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার
-
বহু আন্তর্জাতিক সম্মাননা
অটল বিহারী বাজপেয়ী মৃত্যু
২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট দিল্লির এমস হাসপাতালে অটল বিহারী বাজপেয়ী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তাঁর মৃত্যুর সময় পুরো ভারত শোকাহত হয়ে পড়ে।
তিনি রেখে যান একটি অনন্য রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও আদর্শ।
অটল বিহারী বাজপেয়ীর অবদান
-
তিনি ভারতের রাজনীতিতে স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার প্রতীক ছিলেন।
-
তিনি প্রমাণ করেছেন যে, রাজনীতি কেবল ক্ষমতার নয়, এটি সেবার একটি মাধ্যম।
-
তাঁর নেতৃত্বে ভারত এক নতুন অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিসেবে বিশ্বমঞ্চে আত্মপ্রকাশ করে।
অটল বিহারী বাজপেয়ী ছিলেন ভারতের ইতিহাসে এক অনন্য রাষ্ট্রনায়ক। তিনি রাজনীতি, সাহিত্য ও মানবতার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ভারতের জনগণের হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন। তাঁর জীবন আমাদের শেখায় দেশপ্রেম, সততা ও মানবসেবা হলো সত্যিকার নেতৃত্বের প্রতীক।
