full scren ads

ঝড় ও ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে পার্থক্য কি

প্রকৃতির অন্যতম শক্তিশালী দুটি প্রভাব হলো ঝড় এবং ঘূর্ণিঝড়। অনেকেই মনে করেন দুটিই একই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কিন্তু বাস্তবে এদের গঠন, শক্তি, প্রভাব ও বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। ঝড় হতে পারে হঠাৎ, স্বল্পমেয়াদী ও বিভিন্ন ধরনের; আর ঘূর্ণিঝড় হলো সমুদ্রে তৈরি হওয়া অত্যন্ত শক্তিশালী নিম্নচাপের বিশাল ঘূর্ণিরূপী আঘাত। এ কারণে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ও ক্ষতির মাত্রা ঝড়ের তুলনায় অনেক বেশি। নিচে আমরা ঝড় ও ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে পার্থক্য বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।

ঝড় কি

ঝড় হলো বায়ুমণ্ডলের অস্থিরতার কারণে সৃষ্টি হওয়া তীব্র বাতাস, বজ্রপাত, দমকা হাওয়া বা প্রবল বৃষ্টিসহ এক ধরনের প্রাকৃতিক ঘটনা। ঝড় যেকোনো স্থানে সৃষ্টি হতে পারে স্থলভাগে, পাহাড়ে বা সমুদ্রেও। বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রার আকস্মিক পরিবর্তন, আর্দ্রতার পরিমাণ বৃদ্ধি বা শুষ্কতার কারণে ঝড় বেশি দেখা যায়।

ঝড় বিভিন্ন ধরনের হতে পারে বজ্রঝড়, কালবৈশাখী, বৃষ্টির ঝড়, শিলাবৃষ্টি, তীব্র দমকা হাওয়া ইত্যাদি। বেশিরভাগ ঝড় স্বল্পস্থায়ী, অর্থাৎ কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়।

ঝড়ের ক্ষতি সাধারণত মাঝারি হয়, তবে বজ্রপাত, প্রবল বৃষ্টি বা দমকা হাওয়ার মতো ঘটনাগুলো কখনো কখনো ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ঘূর্ণিঝড় কি

ঘূর্ণিঝড় হলো উষ্ণ সমুদ্রের ওপর সৃষ্টি হওয়া অত্যন্ত শক্তিশালী নিম্নচাপের কেন্দ্র, যেখানে বাতাস দ্রুত ঘূর্ণায়মান অবস্থায় কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে। ঘূর্ণিঝড়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর "Eye" বা চোখ—যা হলো শান্ত কেন্দ্রীয় অংশ। এই চোখের চারপাশে থাকে অত্যন্ত শক্তিশালী বাতাসের ঘূর্ণি, যার গতি ঘণ্টায় ১১৮ কিলোমিটার বা তারও বেশি হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের গঠনের প্রধান কারণ হলো সমুদ্রের ওপর প্রচুর তাপশক্তি জমা হওয়া। উষ্ণ সমুদ্রের পানি বাষ্পীভবনের মাধ্যমে প্রচুর জলীয় বাষ্প তৈরি করে, যা আকাশে উঠে ঠাণ্ডা হয়ে ঘনীভূত হয় এবং নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই নিম্নচাপ শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।

ঘূর্ণিঝড় কেবল সমুদ্রেই জন্ম নেয় এবং ধীরে ধীরে স্থলভাগে আঘাত হানলে প্রচণ্ড বেগে বাতাস, জলোচ্ছ্বাস, ভারী বৃষ্টি ও বন্যা সৃষ্টি করে। এ কারণে ঘূর্ণিঝড়কে বিশ্বের অন্যতম ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ধরা হয়।

ঝড় ও ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে পার্থক্য কি

ঝড় ও ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে প্রথম পার্থক্য হলো গঠনের প্রক্রিয়া। ঝড় বায়ুমণ্ডলের সাধারণ অস্থিরতার কারণে তৈরি হতে পারে, কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম হয় শক্তিশালী নিম্নচাপ ও সমুদ্রের অতিরিক্ত তাপশক্তির কারণে।

দ্বিতীয়ত, আকার ও শক্তি—ঝড় ছোট বা মাঝারি পরিসরের হতে পারে, কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাস হতে পারে শত থেকে হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত। ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতি সাধারণত ঝড়ের তুলনায় অনেক বেশি।

তৃতীয়ত, স্থিতিকাল—ঝড় সাধারণত অল্প সময় স্থায়ী হয়; আর ঘূর্ণিঝড় দীর্ঘসময় স্থায়ী এবং ধীরে ধীরে দেশ-উপকূলে প্রবেশ করে ব্যাপক ক্ষতি করে।

চতুর্থত, ক্ষতির মাত্রা—ঝড় কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতি করলেও তা সীমিত। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি বিপর্যয়কর; ঘরবাড়ি ধ্বংস, গাছপালা উপড়ে ফেলা, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নষ্ট, জলোচ্ছ্বাসে উপকূল ডুবিয়ে দেওয়া ইত্যাদি।

সবশেষে, ঝড় যেকোনো সময় হতে পারে, কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সাধারণত মৌসুমভিত্তিক, বিশেষ করে বর্ষা ও প্রাক-বর্ষা মৌসুমে বেশি তৈরি হয়।

সংক্ষেপে মূল পার্থক্য

  • ঝড় হলো বায়ুর অস্থিতিশীলতার তীব্র রূপ, যা স্বল্পস্থায়ী ও বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।

  • ঘূর্ণিঝড় হলো সমুদ্রে জন্ম নেওয়া শক্তিশালী নিম্নচাপের বিশাল ঘূর্ণি, যার ধ্বংসের ক্ষমতা অনেক বেশি।

  • ঘূর্ণিঝড় সাধারণ ঝড়ের তুলনায় অনেক বড়, শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী।

  • ঝড় স্থল বা সমুদ্র—যেকোনো জায়গায় জন্ম নিতে পারে, কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি কেবল সমুদ্রেই।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url