লাভা ও ম্যাগমা মধ্যে পার্থক্য কি
ভূগোল ও ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানে আগ্নেয়গিরি সংক্রান্ত আলোচনায় “লাভা” ও “ম্যাগমা” শব্দ দুটি প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। অনেক সময় এই দুটি শব্দকে একই অর্থে ব্যবহার করা হলেও বাস্তবে এদের অবস্থান, গঠন ও কার্যকারিতার দিক থেকে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। আগ্নেয়গিরির কার্যক্রম ও পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন বোঝার জন্য লাভা ও ম্যাগমার পার্থক্য জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই লেখায় সহজ ভাষায় উদাহরণসহ লাভা ও ম্যাগমার মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করা হলো।
ম্যাগমা কী
ম্যাগমা হলো পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের নিচে অবস্থিত অত্যন্ত উত্তপ্ত ও গলিত শিলা পদার্থ। এটি উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপের কারণে তরল বা অর্ধতরল অবস্থায় থাকে। ম্যাগমার মধ্যে গলিত শিলা ছাড়াও বিভিন্ন গ্যাস ও খনিজ পদার্থ থাকে।
ম্যাগমা ভূগর্ভে অবস্থান করায় এটি সরাসরি আমাদের চোখে দেখা যায় না। আগ্নেয়গিরির গভীরে ম্যাগমা জমে থাকে এবং চাপ বেড়ে গেলে তা উপরের দিকে উঠতে শুরু করে।
উদাহরণ:
ভূগর্ভস্থ আগ্নেয়গিরির চেম্বারে জমে থাকা গলিত শিলা
পৃথিবীর ম্যান্টল স্তরের গলিত শিলা পদার্থ
লাভা কী
লাভা হলো সেই ম্যাগমা, যা আগ্নেয়গিরির উদ্গীরণের মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠের বাইরে বেরিয়ে আসে। ম্যাগমা যখন ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছে যায়, তখন তাকে লাভা বলা হয়।
ভূ-পৃষ্ঠে বেরিয়ে আসার পর লাভা ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে শক্ত শিলায় রূপান্তরিত হয়। এই লাভার মাধ্যমেই নতুন ভূমি, পাহাড় বা দ্বীপ সৃষ্টি হতে পারে।
উদাহরণ:
আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বের হওয়া জ্বলন্ত গলিত পদার্থ
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের লাভা প্রবাহ
লাভা ও ম্যাগমার মধ্যে পার্থক্য কি
ম্যাগমা ভূ-পৃষ্ঠের নিচে থাকে, লাভা ভূ-পৃষ্ঠের ওপরে প্রবাহিত হয়।
ম্যাগমায় গ্যাসের পরিমাণ বেশি থাকে, লাভায় গ্যাস অনেকটাই বের হয়ে যায়।
ম্যাগমা আগ্নেয়গিরির উৎস বা মূল উপাদান, লাভা হলো তার প্রকাশিত রূপ।
ম্যাগমা চোখে দেখা যায় না, লাভা সরাসরি দেখা যায়।
উদাহরণ দিয়ে সহজ ব্যাখ্যা
ধরা যাক, চুলার ভেতরে রাখা গলিত ধাতু হলো ম্যাগমার মতো।
আর সেই গলিত ধাতু যখন চুলা থেকে বের করে বাইরে ঢালা হয়, সেটি লাভার মতো।
ভূগোল ও পরিবেশে প্রভাব
ম্যাগমা ভূগর্ভে চাপ সৃষ্টি করে আগ্নেয়গিরির কার্যক্রম শুরু করে।
লাভা ভূ-পৃষ্ঠে বের হয়ে নতুন ভূমি তৈরি করতে পারে, আবার মানুষের বসতি ও পরিবেশের জন্য বিপজ্জনকও হতে পারে।
সংক্ষেপে বলা যায়, ম্যাগমা হলো ভূ-পৃষ্ঠের নিচে থাকা গলিত শিলা, আর লাভা হলো সেই ম্যাগমা যা ভূ-পৃষ্ঠে বেরিয়ে এসেছে। অবস্থান ও অবস্থাগত পরিবর্তনের কারণেই ম্যাগমা ও লাভার মধ্যে এই মৌলিক পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে।