full scren ads

ঘূর্ণিঝড় ও টর্নেডোর মধ্যে পার্থক্য কি

প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ও টর্নেডো দুটিই অত্যন্ত বিধ্বংসী। অনেকেই মনে করেন এ দুটো একই ধরনের ঝড়, কিন্তু বাস্তবে তাদের উৎপত্তি, আকার, গতিবেগ, স্থায়িত্ব এবং ধ্বংসক্ষমতা একেবারেই ভিন্ন। ঘূর্ণিঝড় সাধারণত সমুদ্র থেকে জন্ম নেয় এবং বিশাল এলাকায় প্রভাব ফেলে, বিপরীতে টর্নেডো সৃষ্টি হয় বজ্রঝড়ের ভিতর এবং খুব ছোট এলাকায় ভয়াবহ ক্ষতি ঘটায়। এই আর্টিকেলে আমরা সহজ ভাষায় দুটির মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরলাম, যাতে যে কেউ সহজেই বিষয়টি বুঝতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কি

ঘূর্ণিঝড় (Cyclone) হলো উষ্ণ সমুদ্রের উপর সৃষ্টি হওয়া বৃহৎ আকারের নিম্নচাপজনিত ঝড়। সমুদ্রের উপর গরম বাতাস উপরে উঠে শূন্যস্থান তৈরি করে এবং চারদিকের বাতাস দ্রুতগতিতে ঘুরতে ঘুরতে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরি করে। এটি শত শত কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হতে পারে এবং দিনব্যাপী স্থায়ী থাকে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রধান প্রভাব হলো প্রবল বাতাস, ভারী বৃষ্টিপাত ও উপকূলীয় জলোচ্ছ্বাস।

টর্নেডো কি

টর্নেডো (Tornado) হলো শক্তিশালী থンダারস্টর্ম বা বজ্রঝড়ের মধ্যে তৈরি হওয়া সরু ঘূর্ণিঝড়। এটি দেখতে অনেকটা ফানেল বা শিঙের মতো। সাধারণত উষ্ণ ও শীতল বাতাসের সংঘর্ষে বজ্রঝড় তৈরি হয় এবং সেই ঝড়ের ভেতরে সঙ্কুচিত বায়ুর প্রচণ্ড ঘূর্ণায়মান গতিতে টর্নেডো জন্ম নেয়। টর্নেডোর ব্যাস ছোট হলেও বাতাসের গতি অত্যন্ত দ্রুত (৩৫০–৫০০ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত) হতে পারে। এর স্থায়িত্ব মাত্র কয়েক মিনিট।

ঘূর্ণিঝড় ও টর্নেডোর মধ্যে পার্থক্য কি

সৃষ্টি হওয়ার স্থান

ঘূর্ণিঝড় জন্ম নেয় উষ্ণ সমুদ্রের ওপর। সমুদ্রের তাপমাত্রা ২৬–২৮° সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে নিম্নচাপ তৈরি হয় এবং সেই নিম্নচাপ ধীরে ধীরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।
অন্যদিকে টর্নেডো তৈরি হয় মূলত স্থলভাগে—বিশেষ করে উষ্ণ ও শীতল বায়ুর সংঘর্ষপ্রবণ এলাকায় বজ্রঝড়ের ভেতরে।

আকারের পার্থক্য

ঘূর্ণিঝড় আকারে অনেক বড়। এটি শত শত কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত থাকে এবং স্যাটেলাইট থেকেও স্পষ্ট দেখা যায়।

অপরদিকে টর্নেডো খুব ছোট। সাধারণত কয়েকশো মিটার বা এক কিলোমিটার ব্যাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।

বাতাসের গতি

ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতি সাধারণত ১২০–২৫০ কিমি/ঘণ্টার মতো। খুব শক্তিশালী সুপার সাইক্লোনে তা আরও বাড়তে পারে।

টর্নেডো পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগতির ঝড়। এর বাতাসের গতি ৩৫০–৫০০ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত ওঠে, যা পুরো ঘর-বাড়ি উড়িয়ে নিতে সক্ষম।

স্থায়িত্বকাল

ঘূর্ণিঝড় কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, এবং এটি ধীরে ধীরে স্থলভাগে প্রবেশ করলে দুর্বল হয়।

টর্নেডো খুব স্বল্পস্থায়ী—সাধারণত ১ থেকে ১০ মিনিট, বিরল ক্ষেত্রে ৩০–৬০ মিনিট পর্যন্ত থাকতে পারে।

ধ্বংসের মাত্রা

ঘূর্ণিঝড় বড় এলাকায় ক্ষতি করে—ঘরবাড়ি ভেঙে যায়, গাছপালা উপড়ে পড়ে, উপকূলে জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয় এবং বন্যা দেখা দেয়।

টর্নেডো সংকীর্ণ পথে বিপুল ক্ষতি করে। এর পথে যা পড়ে—বাড়ি, গাড়ি, গাছ, খুঁটি—সবকিছু মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে যায়, কিন্তু পার্শ্ববর্তী এলাকা অনেক সময় অক্ষত থাকে।

বিস্তৃতির ধরন

ঘূর্ণিঝড় পুরো অঞ্চলে প্রভাব ফেলে—৫০–৫০০ কিলোমিটার বিস্তৃত হতে পারে।
টর্নেডো মাত্র কয়েক কিলোমিটার পথ জুড়ে এগোয়, কিন্তু সেই পথের ক্ষতি ভয়াবহ।

আগে থেকে পূর্বাভাস

ঘূর্ণিঝড় অনেক আগেই স্যাটেলাইটে ধরা পড়ে। ফলে সরকার কয়েকদিন আগেই সতর্কতা দিতে পারে।
টর্নেডো হঠাৎ তৈরি হয়। পূর্বাভাস দেওয়ার সময় খুব কম, ফলে সতর্কতা দেওয়া কঠিন।

সংক্ষেপে পার্থক্য

  • ঘূর্ণিঝড় সমুদ্র থেকে সৃষ্টি হওয়া বৃহৎ নিম্নচাপজনিত ঝড় – আকারে বড়, স্থায়িত্ব বেশি, ক্ষতিও বিস্তৃত।

  • টর্নেডো বজ্রঝড়ের ভেতর হঠাৎ তৈরি হওয়া সরু ঘূর্ণিঝড় – আকার ছোট, স্থায়িত্ব কম, কিন্তু ধ্বংসক্ষমতা অত্যন্ত বেশি।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url