চাহিদা রেখার ঢাল ও দাম স্থিতিস্থাপকতার পার্থক্য কি
অর্থনীতির শিক্ষায় আমরা প্রায়ই চাহিদা রেখার ঢাল (Slope of Demand Curve) এবং দাম স্থিতিস্থাপকতা (Price Elasticity of Demand) বিষয়গুলো শিখি। অনেকে মনে করেন এগুলো একই বিষয়, কিন্তু বাস্তবে এরা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারণা।
এই আর্টিকেলে সহজ ভাষায় চাহিদা রেখার ঢাল এবং দাম স্থিতিস্থাপকতার সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য এবং মূল পার্থক্য তুলে ধরা হলো।
চাহিদা রেখার ঢাল কি
চাহিদা রেখার ঢাল (Slope of Demand Curve) হলো চাহিদা রেখার একটি গাণিতিক বৈশিষ্ট্য যা দেখায় যে দাম পরিবর্তনের সঙ্গে পরিমাণে কতটা পরিবর্তন ঘটছে। এটি সরলভাবে বোঝায় যে, দাম বাড়লে চাহিদা কমে বা দাম কমলে চাহিদা বাড়ে।
চাহিদা রেখার ঢাল এর বৈশিষ্ট্য
-
চাহিদা এবং দামের সম্পর্ককে বোঝায়
-
ঋণাত্মক (demand curve সাধারণত নিচের দিকে ঢলানো থাকে)
-
নির্দিষ্ট বিন্দুতে পরিমাণ ও দাম পরিবর্তনের অনুপাত দেখায়
-
মূলত গ্রাফিকাল বা গাণিতিক বিশ্লেষণ
চাহিদা রেখার ঢাল এর উদাহরণ
-
যদি পণ্য A-এর দাম ১০ টাকা থেকে ১২ টাকায় ওঠে এবং চাহিদা ৫০ ইউনিট থেকে ৪০ ইউনিটে নেমে আসে, তাহলে ঢাল নির্দেশ করবে পরিমাণের পরিবর্তন কতটুকু হয়েছে।
দাম স্থিতিস্থাপকতা কি
দাম স্থিতিস্থাপকতা (Price Elasticity of Demand) হলো চাহিদার পরিমাণের পরিবর্তনের আপেক্ষিক হার, যা মূল্যের পরিবর্তনের প্রতি চাহিদার প্রতিক্রিয়াকে পরিমাপ করে।
এটি সাধারণত একটি সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
দাম স্থিতিস্থাপকতার বৈশিষ্ট্য
-
চাহিদা পরিবর্তনের আপেক্ষিক হার বোঝায়
-
একক সংখ্যা (elastic, inelastic বা unitary) দিয়ে প্রকাশ করা হয়
-
চাহিদা কতটা সংবেদনশীল তা নির্ধারণ করে
-
সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ
দাম স্থিতিস্থাপকতার উদাহরণ
-
যদি ১০% দাম বৃদ্ধি চাহিদা ২০% কমায়, তাহলে পণ্যের দাম স্থিতিস্থাপকতা = 2 (elastic)
চাহিদা রেখার ঢাল ও দাম স্থিতিস্থাপকতার মধ্যে পার্থক্য কি
১. সংজ্ঞা
-
চাহিদা রেখার ঢাল: দাম পরিবর্তনের সাথে চাহিদার পরিমাণ পরিবর্তনের সরল অনুপাত
-
দাম স্থিতিস্থাপকতা: চাহিদার পরিবর্তনের আপেক্ষিক হার দাম পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায়
২. পরিমাপ
-
চাহিদা রেখার ঢাল: পরিমাণের একক প্রতি দামের পরিবর্তন
-
দাম স্থিতিস্থাপকতা: শতাংশ বা অনুপাতিক পরিবর্তন
৩. ব্যবহার
-
চাহিদা রেখার ঢাল: গ্রাফ বা গাণিতিক বিশ্লেষণে সহজ বোঝার জন্য
-
দাম স্থিতিস্থাপকতা: বাজার নীতি, মূল্য নির্ধারণ ও কর নীতি নির্ধারণে ব্যবহৃত
৪. সংবেদনশীলতা
-
চাহিদা রেখার ঢাল: সরল পরিবর্তনের দিক নির্দেশ করে
-
দাম স্থিতিস্থাপকতা: চাহিদা কতটা সংবেদনশীল তা বোঝায়
৫. উদাহরণ
-
চাহিদা রেখার ঢাল: দাম ১০ টাকা থেকে ১২ টাকায় বাড়লে চাহিদা ৫০ থেকে ৪০ ইউনিটে নেমে আসে
-
দাম স্থিতিস্থাপকতা: একই দামের বৃদ্ধি ২০% চাহিদা হ্রাস ঘটায় → elasticity = 2
সারসংক্ষেপ
-
চাহিদা রেখার ঢাল = দাম ও চাহিদার পরিমাণের সরল পরিবর্তন।
-
দাম স্থিতিস্থাপকতা = চাহিদার আপেক্ষিক পরিবর্তন মূল্য পরিবর্তনের প্রতি সংবেদনশীলতার মাপ।
অর্থাৎ, ঢাল মূলত গাণিতিক ঢাল নির্দেশ করে, আর স্থিতিস্থাপকতা চাহিদার সংবেদনশীলতা বুঝতে সাহায্য করে।