কপিরাইট ও পেটেন্ট এর মধ্যে পার্থক্য কি
মেধাস্বত্ব (Intellectual Property) সুরক্ষার ক্ষেত্রে কপিরাইট এবং পেটেন্ট দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। অনেকেই মনে করেন কপিরাইট আর পেটেন্ট একই জিনিস, কিন্তু বাস্তবে এদের উদ্দেশ্য, সুরক্ষা পদ্ধতি, ব্যবহার, মেয়াদ সবই আলাদা।
এই আর্টিকেলে সহজ ভাষায় কপিরাইট ও পেটেন্টের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য এবং প্রকৃত পার্থক্য তুলে ধরা হলো।
কপিরাইট কি
কপিরাইট হলো এমন একটি আইনি সুরক্ষা, যা সৃজনশীল বা শিল্পকর্মের নির্মাতাকে একচ্ছত্র অধিকার প্রদান করে। কোনো লেখক, শিল্পী, সুরকার বা কনটেন্ট নির্মাতা তার তৈরি কাজের মালিকানা রাখেন এবং অন্য কেউ অনুমতি ছাড়া সেই কাজ নকল, কপি বা ব্যবহার করতে পারে না এটাই কপিরাইট।
কপিরাইট যেসব কাজের ওপর প্রযোজ্য
-
বই, প্রবন্ধ, ব্লগ কনটেন্ট
-
কবিতা, গল্প, উপন্যাস
-
গান, সুর, সংগীত
-
সিনেমা, নাটক
-
ফটোগ্রাফি
-
ডিজাইন
-
সফটওয়্যার কোড ইত্যাদি
কপিরাইটের বৈশিষ্ট্য
-
সৃজনশীল কাজে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কপিরাইট তৈরি হয়
-
মালিকানা লেখকের কাছে থাকে
-
অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়
-
সাধারণত স্রষ্টার মৃত্যুর পর বহু বছর পর্যন্ত কপিরাইট বহাল থাকে (অনেক দেশে ৫০–৭০ বছর)
পেটেন্ট কি
পেটেন্ট হলো নতুন কোনো আবিষ্কার বা প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্য দেওয়া আইনি সুরক্ষা। অর্থাৎ, কেউ যদি নতুন কোনো মেশিন, প্রক্রিয়া, ফর্মুলা বা টেকনোলজি আবিষ্কার করে, তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেই আবিষ্কারের একচ্ছত্র অধিকার তাকে দেওয়া হয় একে বলা হয় পেটেন্ট।
পেটেন্ট যেসব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য
-
নতুন প্রযুক্তি
-
রাসায়নিক ফর্মুলা
-
ঔষধ আবিষ্কার
-
যন্ত্রপাতি
-
উৎপাদন প্রক্রিয়া
-
সফটওয়্যার অ্যালগরিদম (কিছু দেশে)
-
উদ্ভাবনী সিস্টেম
পেটেন্টের বৈশিষ্ট্য
-
আবিষ্কারটি নতুন, ব্যবহারযোগ্য ও অনন্য হতে হবে
-
সরকারিভাবে আবেদন করে পেটেন্ট নিতে হয়
-
সাধারণত ২০ বছর পর্যন্ত সুরক্ষা থাকে
-
অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়
কপিরাইট ও পেটেন্ট এর মধ্যে পার্থক্য কি
সুরক্ষার ধরন
কপিরাইট সুরক্ষা দেয় সাহিত্য, শিল্প, সংগীত, লেখা, ভিডিও, সফটওয়্যার ইত্যাদি সৃজনশীল কাজে।
পেটেন্ট সুরক্ষা দেয় নতুন প্রযুক্তি, আবিষ্কার ও বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনে।
সৃষ্টির ধরন
কপিরাইট স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়, কিন্তু পেটেন্ট পেতে অফিসিয়াল রেজিস্ট্রেশন প্রয়োজন।
উদ্দেশ্য
কপিরাইটের উদ্দেশ্য হলো সৃজনশীল প্রকাশের সুরক্ষা।
পেটেন্টের উদ্দেশ্য হলো উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা এবং আবিষ্কারকের বিনিয়োগ রক্ষা করা।
মেয়াদ
কপিরাইট সাধারণত স্রষ্টার মৃত্যুর পরও দীর্ঘ সময় থাকে।
পেটেন্ট সাধারণত ২০ বছর থাকে।
ব্যবহার
কপিরাইটযুক্ত কনটেন্ট কপি করা বা অনলাইনে পুনঃপ্রকাশ বেআইনি। পেটেন্টযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হলে মালিকের অনুমতি বা লাইসেন্স দরকার।
সারসংক্ষেপ
-
কপিরাইট = সৃজনশীল কাজের সুরক্ষা
-
পেটেন্ট = নতুন আবিষ্কারের সুরক্ষা
কপিরাইট লেখক-শিল্পীদের জন্য, আর পেটেন্ট আবিষ্কারক ও উদ্ভাবকদের জন্য অপরিহার্য।