সমাস কি । সমাস কাকে বলে | সমাস কত প্রকার ও কি কি

বাংলা ভাষা তার সমৃদ্ধ ব্যাকরণ ও সৌন্দর্যবোধের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এই ভাষার গঠন কাঠামোয় যে কয়টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তার মধ্যে "সমাস" একটি অন্যতম। সমাস শব্দটির অর্থই হলো সংক্ষেপণ বা একত্র করা। ভাষার প্রয়োজনে দুটি বা ততোধিক পদের মধ্যে যথাযথ নিয়মে সংযুক্তি ঘটিয়ে একটি নতুন পদ গঠন করার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে। এটি কেবল শব্দসংক্ষেপ নয়, বরং তা ভাবের ঘনত্ব, বাক্যের গতিশীলতা এবং অর্থবোধকতা বৃদ্ধির একটি সূক্ষ্ম কৌশল।

সমাস ব্যবহারে ভাষা হয় সহজ, সুন্দর ও প্রাঞ্জল। সাহিত্যিক রচনায়, বিশেষ করে কাব্য ও গদ্যে, সমাস ব্যবহারের মাধ্যমে লেখার সৌন্দর্য ও গভীরতা বহুগুণে বাড়ানো যায়। যেমন "রাজপুত্র" শব্দটি বললে বোঝায় "রাজার পুত্র" এখানে দুটি শব্দ একত্র হয়ে একটি নতুন, অর্থবোধক ও সংক্ষিপ্ত শব্দে রূপান্তরিত হয়েছে। এই রকম অসংখ্য উদাহরণ বাংলা ভাষায় বিদ্যমান, যা সমাসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরে।

এই প্রবন্ধে আমরা সমাসের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, গঠনপ্রক্রিয়া, উদাহরণসহ বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করব, যেন বাংলা ভাষা ও ব্যাকরণের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি সহজে অনুধাবন করতে পারেন এবং প্রয়োগে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন।

সমাস কি, সমাস কাকে বলে, সমাস শব্দের অর্থ কি

সমাস কি

সমাস হলো দুটি বা ততোধিক পদের মধ্যে নির্দিষ্ট নিয়মে সংযুক্ত হয়ে একটি নতুন পদ গঠনের প্রক্রিয়া। এই প্রক্রায় পদের সংখ্যা কমে যায়, কিন্তু অর্থ রয়ে যায় সম্পূর্ণ বা কখনও আরও ঘন ও গভীর হয়। সহজভাবে বললে, সমাস মানে হলো শব্দসংক্ষেপ বা সংক্ষেপে ভাব প্রকাশ।

উদাহরণ
রাজার পুত্র → রাজপুত্র
এখানে “রাজার” এবং “পুত্র” — দুটি পদ একত্রিত হয়ে “রাজপুত্র” নামক একটি সমাসবদ্ধ পদে পরিণত হয়েছে।

সমাস ব্যবহারের ফলে ভাষা হয় সংক্ষিপ্ত, স্পষ্ট ও কাব্যিক। এটি বাংলা ভাষার ব্যাকরণে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

সমাস কাকে বলে

সমাস শব্দটি সংস্কৃত "সম" এবং "আস" উপসর্গ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ একত্রে আসা বা মিলন। ব্যাকরণ অনুযায়ী, সমাস হলো দুটি বা ততোধিক পদের মধ্যে যথাযথ নিয়মে সংযুক্ত হয়ে একটি নতুন অর্থবোধক শব্দে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া।

অর্থাৎ, ভাষার প্রয়োজনে দুটি শব্দের মধ্যে যতটুকু সম্পর্ক আছে, সেই অনুযায়ী কিছু অংশ বাদ দিয়ে বা রূপান্তর ঘটিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত অথচ অর্থপূর্ণ শব্দ গঠনের নামই সমাস। এতে বাক্য বা শব্দসংখ্যা কমে যায়, কিন্তু ভাব বা অর্থ অক্ষুণ্ণ থাকে—অনেক সময় আরও গভীর হয়।

সমাসের বৈশিষ্ট্য

  1. পদের সংক্ষেপ ঘটে – দুই বা ততোধিক শব্দ একত্রে একটি নতুন শব্দে রূপ নেয়।

  2. অর্থ সংরক্ষিত থাকে – যদিও কিছু শব্দ লোপ পায়, মূল অর্থ হারায় না।

  3. ভাবের ঘনত্ব – কম শব্দে বেশি ভাব প্রকাশ করা সম্ভব হয়।

  4. সাহিত্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় – কাব্য ও গদ্যে শব্দচয়ন হয়ে ওঠে সুষম ও প্রাঞ্জল।

উদাহরণসহ ব্যাখ্যা

১. রাজার পুত্র → রাজপুত্র
এখানে “রাজার” (উপপদ) এবং “পুত্র” (প্রধান পদ) একত্রিত হয়ে “রাজপুত্র” হয়েছে।

  • শব্দসংখ্যা: ২ → ১

  • অর্থ: একই রয়েছে – রাজার সন্তান।

২. গাঁয়ের ছেলে → গাঁছেলে
“গাঁয়ের” ও “ছেলে” একত্রে “গাঁছেলে” শব্দ হয়েছে।

৩. পূজা করার স্থান → পূজাস্থান
“পূজা” ও “স্থান” একত্রে হয়ে একটি নতুন শব্দ হয়েছে, যার অর্থ পূজা করার স্থান।

সমাস কেন ব্যবহার করা হয়?

  1. ভাষা সংক্ষিপ্ত ও সহজ করার জন্য

  2. বাক্যে কাব্যিকতা ও সৌন্দর্য আনার জন্য

  3. লেখাকে মসৃণ ও গতিশীল রাখার জন্য

  4. বেশি ভাব কম শব্দে প্রকাশ করার জন্য


সমাস শব্দের অর্থ কি

“সমাস” শব্দটি এসেছে সংস্কৃত “সম্” ও “আস” উপসর্গ থেকে।

  • “সম্” অর্থ — সঙ্গে, একত্র, যোগ

  • “আস” অর্থ — আসা, স্থাপন হওয়া, যুক্ত হওয়া

এই দুটি উপসর্গ একত্রে হয়ে “সমাস” শব্দটি গঠন করেছে, যার আক্ষরিক অর্থ দাঁড়ায়—একত্র আসা, একত্র হওয়া, বা সংযুক্ত হওয়া। ব্যাকরণিকভাবে বলতে গেলে, সমাস অর্থ হয়—দুটি বা ততোধিক পদ বা শব্দকে সংক্ষেপে মিলিয়ে একটি অর্থপূর্ণ শব্দে পরিণত করার প্রক্রিয়া।

সমাস শব্দের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য

সমাস শুধু শব্দসংক্ষেপ নয়, বরং এটি বাংলা ভাষার সৌন্দর্যবর্ধনের এক চমৎকার উপায়। এর মাধ্যমে:

  • শব্দ হয় সংক্ষিপ্ত

  • বাক্য হয় সরল ও প্রাঞ্জল

  • ভাব প্রকাশ হয় আরও ঘন ও অর্থবহ

  • সাহিত্যিক ভাষা হয়ে ওঠে ছন্দময় ও মার্জিত

সমাসের মূল উদ্দেশ্য কী?

সমাসের মাধ্যমে ভাষা হয় বেশি অর্থবহ কিন্তু কম শব্দে। যেমন—
“রাজার পুত্র” শব্দবন্ধটি দুইটি শব্দ নিয়ে গঠিত, কিন্তু যখন একত্রিত হয়ে “রাজপুত্র” হয়, তখন তা একটি মাত্র শব্দ হয়, যা একই অর্থ বহন করে।

তাই, সমাস শব্দের আক্ষরিক অর্থ “একত্র আসা” হলেও ব্যাকরণে এটি শব্দ সংক্ষিপ্তকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এটি বাংলা ভাষার ব্যাকরণে এমন একটি কৌশল, যা ভাষাকে করে তোলে আরও কার্যকর, গতিশীল ও নান্দনিক।

সমাস কত প্রকার ও কী কী?

বাংলা ব্যাকরণে সমাস প্রধানত পাঁচ প্রকার। প্রতিটি সমাসের গঠনরীতি, অর্থ প্রকাশের ধরন এবং ব্যবহারে আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিচে প্রতিটি সমাসের নাম, সংজ্ঞা ও সংক্ষেপে ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:

১. তৎপুরুষ সমাস

সংজ্ঞা: যে সমাসে পূর্বপদ (উপপদ) প্রধান না হয়ে পরের পদ (প্রধান পদ) মুখ্য হয়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।
লক্ষণ: প্রধান পদটি পরে থাকে, অর্থ বোঝার জন্য “এর”, “কে”, “তে”, “থেকে” ইত্যাদি বিভক্তি কল্পনা করতে হয়।
উদাহরণ:

  • রাজপুরুষ = রাজার পুরুষ

  • গ্রামবাসী = গ্রামের বাসিন্দা

২. কর্মধারয় সমাস

সংজ্ঞা: যে সমাসে দুটি পদ সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ থাকে এবং প্রথম পদ দ্বিতীয় পদের বিশেষণ হিসেবে কাজ করে, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে।
লক্ষণ: দুটি পদই সমান গুরুত্ব পায়, বিশেষণ + বিশেষ্য রূপে গঠিত হয়।
উদাহরণ:

  • সাদা কাপড় = সাদা+কাপড়

  • মহানুভব = মহান + অনুগ্রহী

৩. দ্বন্দ্ব সমাস

সংজ্ঞা: যে সমাসে দুটি বা ততোধিক পদ সমান গুরুত্ব পায় এবং মিলিতভাবে একটি যৌথ অর্থ প্রকাশ করে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
লক্ষণ: পদগুলোতে "ও", "এবং", "বা" ইত্যাদি কল্পনা করা যায়।
উদাহরণ:

  • মা-বাবা = মা ও বাবা

  • রাম-লক্ষ্মণ = রাম এবং লক্ষ্মণ

৪. বহুব্রীহি সমাস

সংজ্ঞা: যে সমাসে গঠিত শব্দ দুটি বা ততোধিক পদের মিলন হলেও মিলিত পদের অর্থ অন্য কিছুকে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।
লক্ষণ: সমাসবদ্ধ শব্দটি যার জন্য প্রযোজ্য, তা সমাসে নেই—অর্থাৎ ভিন্ন ব্যক্তি বা বস্তু বোঝায়।
উদাহরণ:

  • রাজপুত্র = যে রাজার পুত্র (পুত্র হলো সমাসে নেই)

  • নীলকণ্ঠ = যার কণ্ঠ নীল (অর্থে শিব)

৫. দ্বিগু সমাস

সংজ্ঞা: যে সমাসে সংখ্যা বা পরিমাণ বোঝানো হয় এবং পরে বিশেষ্য পদ যুক্ত থাকে, তাকে দ্বিগু সমাস বলে।
লক্ষণ: সংখ্যাবাচক বা পরিমাণবাচক শব্দ + বিশেষ্য = দ্বিগু সমাস
উদাহরণ:

  • তিনকাঠা = তিনটি কাঠা

  • চতুর্বেদ = চারটি বেদ

বাংলা ব্যাকরণে সমাস নির্বাচিত শব্দের বিশ্লেষণ

সমাস হলো বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যার মাধ্যমে দুটি বা ততোধিক শব্দ সংক্ষিপ্ত রূপে মিলিত হয়ে একটি নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি করে। সমাস ব্যবহারের ফলে ভাষা হয় সংক্ষিপ্ত, প্রাঞ্জল ও সৌন্দর্যমণ্ডিত। এই প্রবন্ধে আমরা কিছু নির্দিষ্ট শব্দ বিশ্লেষণ করে দেখব, তারা কোন প্রকার সমাস এবং কেন সেই শ্রেণিভুক্ত হয়েছে।

১. তেপান্তর কোন সমাস

তিন + পান্তর (অর্থাৎ মাঠ বা প্রান্তর) — এই দুটি শব্দ মিলিয়ে “তেপান্তর” শব্দ গঠিত হয়েছে। এখানে “তিন” একটি সংখ্যাবাচক শব্দ এবং “পান্তর” একটি বিশেষ্য পদ।
🔹 এটি দ্বিগু সমাস, কারণ সংখ্যাবাচক শব্দ দ্বারা বিশেষ্য পদকে যুক্ত করা হয়েছে।
🔹 অর্থ: অনেক দূর বিস্তৃত প্রান্তর।

গায়ে হলুদ কোন সমাস

“গায়ে হলুদ” শব্দটি বাংলা সংস্কৃতির একটি বিশেষ আচার বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এটি গঠিত হয়েছে “গায়ে” (অবস্থানবাচক) এবং “হলুদ” (বস্তু) শব্দ দ্বারা।
🔹 এটি তৎপুরুষ সমাস, কারণ প্রথম পদ (গায়ে) পরে আসা পদ (হলুদ)-এর গুণ বা ব্যবহার প্রকাশ করছে।
🔹 অর্থ: গায়ে দেওয়া হলুদের অনুষ্ঠান।

শশব্যস্ত কোন সমাস

এই শব্দটি “শশ” (শ্বাস) এবং “ব্যস্ত” শব্দ দিয়ে গঠিত। এই দুটি শব্দ একত্রে এমন একজন ব্যক্তির দিক নির্দেশ করে, যে অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে শ্বাস নিতে নিতে ছুটছে বা দৌঁড়াচ্ছে।
🔹 এটি বহুব্রীহি সমাস, কারণ সমাসবদ্ধ শব্দটি যার জন্য প্রযোজ্য (ব্যক্তি), সে নিজে শব্দে নেই।
🔹 অর্থ: যিনি দম ফেলে ব্যস্ত।

সেতার কোন সমাস

“সেতার” শব্দটি এসেছে “স” (সংক্ষেপে “সপ্ত”) এবং “তার” শব্দ দুটি থেকে। এটি একটি বাদ্যযন্ত্র, যার সাতটি তার থাকে।
🔹 এটি তৎপুরুষ সমাস, কারণ “স” (সপ্ত) শব্দটি “তার”-এর সংখ্যা নির্দেশ করছে।
🔹 অর্থ: সাত তারবিশিষ্ট বাদ্যযন্ত্র।

চৌচালা কোন সমাস

“চৌচালা” শব্দে রয়েছে “চৌ” (অর্থ: চার) এবং “চালা” (ছাদ)। এখানে একটি সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে একটি বিশেষ্য শব্দ মিলেছে।
🔹 এটি দ্বিগু সমাস, কারণ সংখ্যার সঙ্গে বস্তু মিলিয়ে গঠিত।
🔹 অর্থ: চারটি চালা-যুক্ত ঘর বা ছাদ।

নরাধম কোন সমাস

এই শব্দটি “নর” (মানুষ) এবং “অধম” (নিকৃষ্ট) থেকে গঠিত। তবে শব্দটি কাউকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয় যিনি নরের মধ্যে সবচেয়ে অধম।
🔹 এটি বহুব্রীহি সমাস, কারণ যাকে বোঝানো হচ্ছে, সে নিজে শব্দে নেই—শব্দটি অন্য কারো গুণ প্রকাশ করে।
🔹 অর্থ: নিকৃষ্ট বা অধম ব্যক্তি।

বৈষম্যবিরোধী কোন সমাস

“বৈষম্যবিরোধী” শব্দটি গঠিত হয়েছে “বৈষম্য” (বিচারহীনতা) ও “বিরোধী” (প্রতিপক্ষ) পদ দিয়ে। এখানে দ্বিতীয় পদ “বিরোধী” মুখ্য এবং প্রথম পদ “বৈষম্য” তার ক对象 বোঝায়।
🔹 এটি তৎপুরুষ সমাস, কারণ প্রধান পদ দ্বিতীয়টি এবং অর্থ বোঝাতে “এর বিরোধী” কল্পনা করা যায়।
🔹 অর্থ: বৈষম্যের বিরোধিতা করা ব্যক্তি বা নীতি।

উপরের আলোচনায় আমরা দেখতে পেলাম সমাস কেবল শব্দ সংক্ষেপ নয়, এটি ভাষার ভাব প্রকাশের একটি কার্যকর পদ্ধতি। প্রতিটি সমাসের নিজস্ব গঠনরীতি ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা শব্দের গভীরতা ও প্রাসঙ্গিকতা বাড়ায়। ভাষার সৌন্দর্য ও ব্যাকরণিক গঠন বোঝার জন্য সমাসের সঠিক ব্যবহার ও বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সমাস সম্পর্কিত সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

সমাস কী?
সমাস হলো দুটি বা ততোধিক শব্দকে সংক্ষেপে একটি নতুন অর্থবোধক শব্দে পরিণত করার ব্যাকরণিক প্রক্রিয়া।

সমাস শব্দের অর্থ কী?
সমাস শব্দের অর্থ একত্র হওয়া বা মিলন, যা সংস্কৃত “সম্” ও “আস” ধাতু থেকে এসেছে।

সমাস কেন ব্যবহৃত হয়?
ভাষাকে সংক্ষিপ্ত, প্রাঞ্জল এবং অর্থবহ করার জন্য সমাস ব্যবহৃত হয়।

সমাস কত প্রকার?
সমাস সাধারণত পাঁচ প্রকার—তৎপুরুষ, কর্মধারয়, দ্বন্দ্ব, বহুব্রীহি ও দ্বিগু।

তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?
যে সমাসে পরের পদ প্রধান হয় এবং “এর”, “কে”, “তে” ইত্যাদি বিভক্তি কল্পনা করা যায়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।

কর্মধারয় সমাস কাকে বলে?
যে সমাসে উভয় পদ সমান গুরুত্বপূর্ণ থাকে এবং প্রথম পদ দ্বিতীয় পদের বিশেষণ হিসেবে কাজ করে, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে।

দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে?
যে সমাসে একাধিক শব্দ সমান গুরুত্ব পায় এবং তাদের মধ্যে “ও”, “এবং” কল্পনা করা যায়, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।

বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে?
যে সমাসে গঠিত পদ অন্য কাউকে বোঝায় এবং সেই ব্যক্তি বা বস্তুর উল্লেখ সরাসরি থাকে না, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।

দ্বিগু সমাস কাকে বলে?
যে সমাসে সংখ্যাবাচক বা পরিমাণবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদ যুক্ত হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে।

তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ কী?
রাজপুত্র = রাজার পুত্র

কর্মধারয় সমাসের উদাহরণ কী?
সাদা কাপড় = সাদা + কাপড়

দ্বন্দ্ব সমাসের উদাহরণ কী?
মা-বাবা = মা ও বাবা

বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ কী?
নীলকণ্ঠ = যার কণ্ঠ নীল (শিব)

দ্বিগু সমাসের উদাহরণ কী?
চতুর্বেদ = চারটি বেদ

সমাস ও উপসর্গের পার্থক্য কী?
সমাসে দুটি পূর্ণ শব্দ মিলে একটি শব্দ হয়, উপসর্গে একটি শব্দের পূর্বে অপরটি যোগ হয়।

সমাসে শব্দসংখ্যা বাড়ে না কমে?
সমাসে শব্দসংখ্যা কমে যায় কিন্তু অর্থ অক্ষুণ্ণ থাকে।

সমাসে কোনটি প্রধান হয়?
তৎপুরুষ সমাসে পরের পদ, বহুব্রীহিতে কেউই প্রধান নয়, বরং বোঝানো ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ।

‘রাজপুত্র’ কোন সমাস?
তৎপুরুষ সমাস

‘গরুগাড়ি’ কোন সমাস?
তৎপুরুষ সমাস

‘নীলকমল’ কোন সমাস?
কর্মধারয় সমাস

‘দীনহীন’ কোন সমাস?
দ্বন্দ্ব সমাস

‘পঞ্চবটী’ কোন সমাস?
দ্বিগু সমাস

‘চন্দ্রবদন’ কোন সমাস?
কর্মধারয় সমাস

‘অগ্নিদগ্ধ’ কোন সমাস?
বহুব্রীহি সমাস

‘সীতারাম’ কোন সমাস?
দ্বন্দ্ব সমাস

‘স্বর্ণলতা’ কোন সমাস?
কর্মধারয় সমাস

‘চৌচালা’ কোন সমাস?
দ্বিগু সমাস

‘শশব্যস্ত’ কোন সমাস?
বহুব্রীহি সমাস

‘সেতার’ কোন সমাস?
তৎপুরুষ সমাস

‘নরাধম’ কোন সমাস?
বহুব্রীহি সমাস

‘তেপান্তর’ কোন সমাস?
দ্বিগু সমাস

‘গায়ে হলুদ’ কোন সমাস?
তৎপুরুষ সমাস

‘দশদিক’ কোন সমাস?
দ্বিগু সমাস

‘বাঙালি’ কোন সমাস?
তৎপুরুষ সমাস (বাংলার অধিবাসী)

‘পরলোক’ কোন সমাস?
তৎপুরুষ সমাস

‘দূরদর্শন’ কোন সমাস?
কর্মধারয় সমাস

‘অগ্নিমুখ’ কোন সমাস?
তৎপুরুষ সমাস

‘রাজরোষ’ কোন সমাস?
তৎপুরুষ সমাস

‘দুঃখসুখ’ কোন সমাস?
দ্বন্দ্ব সমাস

‘হরিদ্রা’ কোন সমাস?
কর্মধারয় সমাস

‘দশভুজা’ কোন সমাস?
দ্বিগু সমাস

‘অন্নদাতা’ কোন সমাস?
তৎপুরুষ সমাস

‘হৃদয়বিদারক’ কোন সমাস?
বহুব্রীহি সমাস

‘বিশ্ববিখ্যাত’ কোন সমাস?
বহুব্রীহি সমাস

‘নিত্যনতুন’ কোন সমাস?
দ্বন্দ্ব সমাস

‘বৈষম্যবিরোধী’ কোন সমাস?
তৎপুরুষ সমাস

‘সুরসিক’ কোন সমাস?
বহুব্রীহি সমাস

‘সত্যবচন’ কোন সমাস?
তৎপুরুষ সমাস

‘আকাশপথ’ কোন সমাস?
তৎপুরুষ সমাস

‘অমৃতবাণী’ কোন সমাস?
বহুব্রীহি সমাস

‘স্বজনবিচ্ছিন্ন’ কোন সমাস?
বহুব্রীহি সমাস

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url