অর্থনীতি কি। অর্থনীতি কাকে বলে । অর্থনীতির জনক কে

মানুষ সামাজিক জীব, যার প্রতিদিনের জীবনযাপন, প্রয়োজন, এবং চাহিদা পূরণের সঙ্গে অর্থের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীরভাবে জড়িত। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা—এই মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য মানুষ নিরন্তর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কিন্তু পৃথিবীর সম্পদ সীমিত, আর মানুষের চাহিদা অসীম। এই সীমিত সম্পদ দিয়ে কিভাবে অসীম চাহিদা পূরণ করা যায়, কীভাবে উৎপাদন ও বণ্টন হতে পারে, কীভাবে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করতে হয়—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় একটি গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্র, যার নাম অর্থনীতি। অর্থনীতি আমাদের শেখায় কীভাবে আমরা সীমিত সম্পদকে সর্বোচ্চভাবে ব্যবহার করে আমাদের প্রয়োজন মেটাতে পারি। এটি শুধু ব্যক্তি বা পরিবার নয়, বরং রাষ্ট্র ও সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের দিকনির্দেশনাও দেয়।

অর্থনীতি কী?

অর্থনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিজ্ঞান, যা মানুষ কীভাবে সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে তাদের অসীম চাহিদা পূরণ করে, সেই বিষয়টি বিশ্লেষণ করে। মানুষ জন্মগতভাবে চাহিদাসম্পন্ন এবং প্রতিনিয়ত খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো নানা বিষয়ে প্রয়োজন অনুভব করে। কিন্তু পৃথিবীতে এই চাহিদা পূরণের জন্য যে সম্পদ রয়েছে, তা সীমিত। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও মানুষকে বেছে নিতে হয়—কোন পণ্য কিনবে, কোনটা ত্যাগ করবে, কতটা সঞ্চয় করবে এবং কতটা ব্যয় করবে।

অর্থনীতি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করে এবং আমাদের শেখায় কিভাবে সীমিত সম্পদকে সর্বোচ্চভাবে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চাহিদা পূরণ করা যায়। এটি উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ, বিনিয়োগ ও সরকারের অর্থনৈতিক নীতিমালাসহ নানা বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়।

সোজা ভাষায় বললে, অর্থনীতি এমন একটি শাস্ত্র যা আমাদের জীবনযাপনের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত এবং আমাদেরকে শেখায় কীভাবে অর্থ ও সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে সর্বোচ্চ কল্যাণ অর্জন সম্ভব হয়।

অর্থনীতি কাকে বলে

অর্থনীতি হল একটি সামাজিক বিজ্ঞান যা মানুষের অসীম চাহিদা এবং সীমিত সম্পদের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রেখে কীভাবে সর্বোচ্চ কল্যাণ অর্জন করা যায়, সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। সহজভাবে বললে, অর্থনীতি শেখায় কীভাবে মানুষ, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র তাদের সম্পদ, সময় ও অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করে চাহিদা পূরণ করতে পারে।

প্রতিটি মানুষের বিভিন্ন চাহিদা রয়েছে—যেমন: খাদ্য খাওয়া, ভালো ঘরে থাকা, ভালো পোশাক পরা, শিক্ষিত হওয়া বা চিকিৎসা নেওয়া। কিন্তু এই চাহিদাগুলো পূরণের জন্য অর্থ, সময় এবং অন্যান্য সম্পদ প্রয়োজন, যেগুলো সীমিত। তাই মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় কোনটা আগে করবে, কোনটা পরে করবে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভিত্তি এবং কৌশল নির্ধারণ করে দেয় অর্থনীতি।

অর্থনীতি কেবল ব্যক্তি বা পরিবার পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকার এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এর প্রভাব বিস্তৃত। এটি ব্যাখ্যা করে কিভাবে একটি রাষ্ট্র তার আয়-ব্যয়, উৎপাদন, বেকারত্ব, দারিদ্র্য দূরীকরণ, এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনা করে।


ধরা যাক, একজন ব্যক্তি মাসে ২০,০০০ টাকা আয় করেন। তার এই টাকায় চলতে হয়—বাড়ি ভাড়া দিতে হয়, খাবার কিনতে হয়, ছেলেমেয়ের পড়াশোনা চালাতে হয়, কখনও চিকিৎসার খরচ হয় আবার সঞ্চয়ও করতে হয়। এখন এই মানুষটির সামনে প্রশ্ন—সে কত টাকা খরচ করবে খাবারে, কতটা দেবে ভাড়ায়, কতটা সঞ্চয় করবে? এখানে তার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া, সেটি একটি অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তই অর্থনীতির বিষয়।

আরেকটি উদাহরণ একটি রাষ্ট্র যদি স্থির করে—এই বছরে কৃষি খাতে ১০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে, তবে তার মানে এই নয় যে অন্যান্য খাত যেমন—শিক্ষা বা স্বাস্থ্য উপেক্ষিত হবে না, বরং এই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সরকারকে ভাবতে হয় কোন খাতে বিনিয়োগে সর্বোচ্চ কল্যাণ আসবে। এটিও অর্থনীতির অংশ।

ব্যষ্টিক অর্থনীতি কাকে বলে

ব্যষ্টিক অর্থনীতি (Microeconomics) হল অর্থনীতির একটি শাখা, যা ব্যক্তি, পরিবার, প্রতিষ্ঠান বা একটি নির্দিষ্ট বাজারে অর্থনৈতিক আচরণ ও সিদ্ধান্ত বিশ্লেষণ করে। এটি বোঝার চেষ্টা করে—একজন ভোক্তা কীভাবে পণ্য কেনে, একজন উৎপাদক কীভাবে উৎপাদনের পরিমাণ নির্ধারণ করে, অথবা বাজারে কিভাবে মূল্য নির্ধারিত হয়।

এই শাখাটি ছোট ছোট অর্থনৈতিক এককগুলোর মধ্যে সম্পর্ক, চাহিদা ও জোগান, দাম নির্ধারণ, উপযোগ, লাভ, ব্যয় ও বাজার কাঠামো ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করে। ব্যষ্টিক অর্থনীতি মূলত "ছোট পরিসরে" কী ঘটছে তা বিশ্লেষণ করে, যেখানে প্রতিটি সিদ্ধান্তের প্রভাব ছোট একটি অংশে সীমাবদ্ধ থাকে।

ব্যষ্টিক অর্থনীতি কি

১. যদি আমরা দেখি একজন ক্রেতা বাজারে ৫০ টাকা দামের একটি কেজি চাল কিনছে কিনা, তাহলে সেটি ব্যষ্টিক অর্থনীতির বিষয়।
২. আবার একটি মোবাইল কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে—তার নতুন মডেলের ফোনের দাম কত হবে, তাহলে সেটিও ব্যষ্টিক অর্থনীতির আওতাভুক্ত।
৩. দোকানে কোন পণ্যের দাম বাড়লে ক্রেতারা কম কিনছে—এ ধরনের আচরণ ব্যষ্টিক অর্থনীতির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়।

ব্যষ্টিক অর্থনীতি ব্যক্তি বা ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক এককের আচরণ, চাহিদা-জোগান, বাজারে দাম নির্ধারণ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। এটি আমাদের শেখায় কিভাবে ছোট ছোট সিদ্ধান্তগুলো অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

মৌলিক ব্যষ্টিক অর্থনীতি

মৌলিক ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলতে ব্যষ্টিক অর্থনীতির সেই মূল ধারণাগুলোকে বোঝানো হয়, যেগুলোর মাধ্যমে ব্যক্তি, পরিবার কিংবা ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে অর্থনৈতিক আচরণ, সিদ্ধান্ত ও বাজার কার্যক্রম বিশ্লেষণ করা হয়। এগুলো অর্থনীতির ভিত্তি গঠন করে এবং ছোট ছোট অর্থনৈতিক এককের কার্যকলাপ বোঝাতে সাহায্য করে। নিচে মৌলিক ব্যষ্টিক অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো ব্যাখ্যা সহ তুলে ধরা হলো

১. চাহিদা (Demand)

চাহিদা হলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ও নির্দিষ্ট মূল্যে ভোক্তার একটি পণ্যের প্রতি আগ্রহ ও সেই পণ্য ক্রয় করার সক্ষমতা।
উদাহরণ: যখন চালের দাম কমে যায়, তখন মানুষ বেশি চাল কিনতে চায়—এটাই চাহিদা।

২. জোগান (Supply)

জোগান হল নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট মূল্যে উৎপাদকরা বাজারে যে পরিমাণ পণ্য দিতে আগ্রহী, তা।
উদাহরণ: চালের দাম বেড়ে গেলে কৃষক বেশি চাল বাজারে দিতে চায়—এটাই জোগান।

৩. মূল্য নির্ধারণ (Price Determination)

চাহিদা ও জোগানের মাধ্যমে বাজারে যে মূল্যে পণ্য বিক্রি হয়, তাকেই বাজার মূল্য বলা হয়। এটি ব্যষ্টিক অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
উদাহরণ: যদি বাজারে ডিমের চাহিদা বেশি হয়, তবে দাম বাড়ে; আর চাহিদা কমলে দাম কমে যায়।

৪. উপযোগ (Utility)

উপযোগ হল কোনো পণ্য বা সেবার মাধ্যমে ভোক্তা যে সন্তুষ্টি বা আনন্দ লাভ করে।
উদাহরণ: ক্ষুধার সময় ভাত খেলে যে শান্তি বা তৃপ্তি মেলে, সেটিই উপযোগ।

৫. ভোগকারীর আচরণ (Consumer Behavior)

কোন দামে, কত পণ্য কিনবে, কীভাবে পছন্দ করবে—এই সব কিছুই ভোক্তার আচরণের মধ্যে পড়ে। ব্যষ্টিক অর্থনীতি এই আচরণ বিশ্লেষণ করে।

৬. উৎপাদক ও উৎপাদন খরচ (Producer and Cost of Production)

উৎপাদক কীভাবে খরচ কমিয়ে মুনাফা বাড়াবে, উৎপাদনের পরিমাণ কিভাবে বাড়াবে—এই বিষয়গুলো ব্যষ্টিক অর্থনীতির অংশ।

৭. বাজার কাঠামো (Market Structure)

বাজারের ধরন যেমন—একচেটিয়া বাজার, মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক বাজার, স্বল্প প্রতিযোগিতার বাজার ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে।

ব্যষ্টিক অর্থনীতির জনক কে

অর্থনীতি মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যার মাধ্যমে ব্যক্তি, পরিবার, প্রতিষ্ঠান এমনকি রাষ্ট্রও তাদের সম্পদ, চাহিদা ও সিদ্ধান্তের ভারসাম্য নির্ণয় করে। অর্থনীতিকে সাধারণত দুইটি প্রধান শাখায় ভাগ করা হয়—ব্যষ্টিক অর্থনীতি ও সামষ্টিক অর্থনীতি। এর মধ্যে ব্যষ্টিক অর্থনীতি ব্যক্তি বা ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক এককের আচরণ, চাহিদা-জোগান, মূল্য নির্ধারণ, উৎপাদন ও উপযোগ নিয়ে আলোচনা করে। এই শাখাটির ভিত্তি ও কাঠামো গঠনের পেছনে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন একজন খ্যাতনামা ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ, যার নাম আলফ্রেড মার্শাল (Alfred Marshall)

১৯শ শতকের শেষ দিকে তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ "Principles of Economics" (1890) প্রকাশের মাধ্যমে অর্থনীতিকে একটি বিশ্লেষণভিত্তিক, যৌক্তিক ও গণনামূলক শাস্ত্রে পরিণত করেন। তিনি চাহিদা ও জোগানের পারস্পরিক সম্পর্ক, উপযোগ, খরচ ও মূল্য নির্ধারণ, সীমান্ত বিশ্লেষণ (Marginal Analysis) এবং বাজার কাঠামো নিয়ে যে তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দেন, তা আজও ব্যষ্টিক অর্থনীতির মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত।

তাই, অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের সূক্ষ্ম দিকগুলো প্রকাশ ও পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য তাকে যথাযথভাবেই "ব্যষ্টিক অর্থনীতির জনক" বলা হয়। তাঁর অবদান ছাড়া এই শাখাটি এত সুসংগঠিত ও কার্যকর হতো না।

ব্যষ্টিক অর্থনীতি বই pdf download

নিচে কিছু নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে  ব্যষ্টিক অর্থনীতি বিষয়ে পিডিএফ ফরম্যাটে বাংলা ও ইংরেজি বই  ডাউনলোড লিঙ্ক প্রদান করা হলো। কিছু ওয়েবসাইটে পিডিএফ ডাউনলোডের জন্য নিবন্ধন বা লগইন প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া, কিছু বই কপিরাইট সুরক্ষিত হতে পারে, তাই ব্যবহারের আগে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটের শর্তাবলী পড়ে নিন।

  1. বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (BOU)
    বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যষ্টিক অর্থনীতি বইটি সহজ ভাষায় রচিত এবং শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী।
    🔗 ডাউনলোড লিঙ্ক: (EbookBou)

  2. Scribd এ ব্যষ্টিক অর্থনীতি
    এই পিডিএফটি Scribd-এ আপলোড করা হয়েছে এবং অনার্স ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী।
    🔗 ডাউনলোড লিঙ্ক: (Scribd)

  3. Principles of Microeconomics - OpenStax
    এই বইটি OpenStax দ্বারা প্রকাশিত এবং এটি ব্যষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক ধারণাগুলি সহজভাবে উপস্থাপন করে।
    🔗 ডাউনলোড লিঙ্ক: (OpenStax)

  4. Intermediate Microeconomics: A Modern Approach - Hal R. Varian
    এই বইটি ব্যষ্টিক অর্থনীতির মধ্যবর্তী স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী।
    🔗 ডাউনলোড লিঙ্ক: (KSU Faculty)

  5. Microeconomics - David Besanko & Ronald Braeutigam
    এই বইটি আধুনিক ব্যষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে।
    🔗 ডাউনলোড লিঙ্ক: (KSU Faculty)



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url