আদ্রতা কি | আদ্রতা কাআকে বলে | আদ্রতা বলতে কি বুঝায়
প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো আদ্রতা। এটি মূলত বায়ুমণ্ডলে বিদ্যমান জলীয় বাষ্পের পরিমাণকে নির্দেশ করে, যা আবহাওয়া, জলবায়ু, কৃষিকাজ, এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। আদ্রতার উপস্থিতি অনুভূত হয় বাতাসের আর্দ্রতা, ঘামের বাষ্পীভবন, অথবা মেঘ ও বৃষ্টিপাতের আচরণে। আবহাওয়াবিদরা বায়ুর আদ্রতা নির্ণয় করে নির্ধারণ করেন দিনের তাপমাত্রা কতটা গরম বা ঠান্ডা লাগবে, কিংবা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কতটা রয়েছে। আবার কৃষকদের জন্যও আদ্রতার মাত্রা জানা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি শস্য উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। শুধু প্রকৃতি নয়, স্বাস্থ্য, ইন্ডাস্ট্রি, এমনকি নির্মাণ কাজেও আদ্রতার ভূমিকা বিশাল। তাই আদ্রতা সম্পর্কে গভীরভাবে জানা এবং তা নিয়ন্ত্রণ বা পর্যবেক্ষণ করা আধুনিক জীবনের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। এই প্রবন্ধে আমরা আদ্রতা কী, এর প্রকারভেদ, পরিমাপের পদ্ধতি, প্রভাব ও গুরুত্বসহ নানা দিক বিশদভাবে আলোচনা করবো।
আদ্রতা কি
আদ্রতা (Humidity) হলো বায়ুমণ্ডলে থাকা জলীয় বাষ্পের পরিমাণ। এটি বোঝায় যে বাতাসে কতটা পানির বাষ্প মিশে আছে। সাধারণত আমরা যখন গরম ও ঘামযুক্ত পরিবেশ অনুভব করি, তখন বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে। আদ্রতা বেশি হলে ঘাম সহজে শুকায় না, ফলে শরীর ঠান্ডা হতে কষ্ট হয়। আবার আদ্রতা কম হলে বাতাস শুষ্ক থাকে।
আদ্রতা দুইভাবে প্রকাশ করা হয়: আপেক্ষিক আদ্রতা (Relative Humidity) এবং নির্দিষ্ট আদ্রতা (Absolute Humidity)। আপেক্ষিক আদ্রতা হলো একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বাতাস কতটা জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারছে তার শতকরা হার। এটি আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও মানবস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
আদ্রতা কাকে বলে
আদ্রতা হলো বায়ুমণ্ডলে বিদ্যমান জলীয় বাষ্পের পরিমাণ। সহজভাবে বলা যায়, বাতাসে থাকা অদৃশ্য পানির বাষ্পই আদ্রতা নামে পরিচিত। এটি নির্ধারণ করে বাতাস কতটা স্যাঁতসেঁতে বা শুষ্ক হবে। আদ্রতা বেশি হলে বাতাস আর্দ্র অনুভূত হয় এবং ঘাম সহজে শুকায় না; আবার আদ্রতা কম হলে পরিবেশ শুষ্ক হয়ে যায়।
পরম আদ্রতা কাকে বলে
পরম আদ্রতা (Absolute Humidity) কাকে বলে—এটি হলো নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে থাকা জলীয় বাষ্পের প্রকৃত পরিমাণ। সাধারণত প্রতি ঘন মিটার (cubic meter) বায়ুতে কতো গ্রাম জলীয় বাষ্প আছে, তা দিয়ে পরম আদ্রতা প্রকাশ করা হয়। একে গ্রাম প্রতি ঘন মিটার (g/m³) এককে মাপা হয়।
উদাহরণ: যদি ১ ঘন মিটার বায়ুতে ১০ গ্রাম জলীয় বাষ্প থাকে, তাহলে পরম আদ্রতা হবে ১০ g/m³।
পরম আদ্রতা তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে এবং এটি বায়ুর মোট জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বুঝতে সাহায্য করে।
বায়ুর আদ্রতা কাকে বলে
বায়ুর আদ্রতা হলো বায়ুমণ্ডলে থাকা জলীয় বাষ্পের পরিমাণ, যা বাতাসের আর্দ্রতা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। সহজভাবে বলা যায়, বাতাসে কতটা পানির বাষ্প মিশে আছে, সেটাই বায়ুর আদ্রতা। এটি বাতাস কতটা স্যাঁতসেঁতে বা শুষ্ক হবে তা নির্ধারণ করে এবং আবহাওয়া, কৃষি ও স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
আদ্রতা ৯০% বলতে কি বুঝায়?
আদ্রতা ৯০% বলতে বোঝায়, বাতাস তার সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতার ৯০% পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণ করছে। অর্থাৎ, ওই তাপমাত্রায় বাতাস যতটা পানি ধারণ করতে পারে, তার ৯০% ইতোমধ্যেই রয়েছে। এই অবস্থায় বাতাস খুব আর্দ্র থাকে, ঘাম সহজে শুকায় না, এবং পরিবেশ স্যাঁতসেঁতে ও অস্বস্তিকর অনুভব হয়।
আপেক্ষিক আদ্রতা কি
আপেক্ষিক আদ্রতা হলো বায়ুমণ্ডলে বিদ্যমান জলীয় বাষ্পের পরিমাণ এবং একই তাপমাত্রায় বায়ু যতটা সর্বোচ্চ জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে তার শতকরা অনুপাত। এটি শতাংশে প্রকাশ করা হয় এবং সাধারণত আবহাওয়ার আর্দ্রতা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
যখন বলা হয় আপেক্ষিক আদ্রতা ৭০%, তখন বুঝায় বাতাস তার সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতার ৭০% জলীয় বাষ্প ধারণ করছে। এই পরিমাণ যদি ১০০% হয়, তাহলে বাতাস সম্পূর্ণ স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়, এবং বৃষ্টিপাত বা শিশির পড়ার সম্ভাবনা থাকে। আপেক্ষিক আদ্রতা পরিবেশের গরম-ঠান্ডা অনুভূতি, ঘামের শুকানোর গতি ও মানুষের আরামবোধের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
আপেক্ষিক আদ্রতা কাকে বলে
আপেক্ষিক আদ্রতা হলো বায়ুতে বিদ্যমান জলীয় বাষ্পের পরিমাণ এবং একই তাপমাত্রায় বায়ু যতটা সর্বোচ্চ জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে, তার শতকরা অনুপাত। এটি সাধারণত শতাংশে প্রকাশ করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ধরো কোনো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বায়ু সর্বোচ্চ ২০ গ্রাম জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে, কিন্তু বর্তমানে সেখানে ১৬ গ্রাম বাষ্প রয়েছে। তাহলে আপেক্ষিক আদ্রতা হবে (১৬÷২০)×১০০ = ৮০%।
আপেক্ষিক আদ্রতা ১০০% হলে বোঝায়, বায়ু সম্পূর্ণ স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে এবং আর জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারছে না এ অবস্থায় বৃষ্টিপাত বা শিশির পড়া শুরু হতে পারে। এই মানটি আবহাওয়া বুঝতে, ঘামের বাষ্পীভবন নির্ধারণে এবং পরিবেশের স্বস্তি বা অস্বস্তি বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
আপেক্ষিক আদ্রতা কম হলে কি হয়
আপেক্ষিক আদ্রতা কম হলে বাতাস শুষ্ক হয়ে যায়। এর ফলে ঘাম দ্রুত শুকিয়ে যায়, তাই শরীর ঠান্ডা অনুভব করে। শুষ্ক বাতাসে ত্বক, চুল ও চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া শুষ্ক পরিবেশে শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা বাড়তে পারে এবং গাছপালা, ফসলও খরা বা জল সংকটে পড়তে পারে। অভ্যন্তরীণ ঘরেও কম আদ্রতা থাকলে গরম বা শীতের অনুভূতি পরিবর্তিত হয়।
আপেক্ষিক আদ্রতা বেশি হলে কি হয়
আপেক্ষিক আদ্রতা বেশি হলে বাতাস স্যাঁতসেঁতে বা আর্দ্র অনুভূত হয়। এর ফলে ঘাম শুষ্ক হতে পারে না, তাই শরীর গরম ও অস্বস্তিকর লাগে। বেশি আদ্রতা থাকার কারণে ফাংগাস বা ছত্রাক জন্মানোর সম্ভাবনা বাড়ে এবং কাপড়, জুতা ইত্যাদি ভেজা বা দুর্গন্ধযুক্ত হতে পারে। অনেক সময় বেশি আর্দ্রতা শ্বাসকষ্ট, এলার্জি এবং ত্বকের সমস্যা সৃষ্টি করে। পরিবেশে বৃষ্টি বা কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
আপেক্ষিক আদ্রতা কত হলে বৃষ্টি হবে
আপেক্ষিক আদ্রতা সাধারণত ৯০% বা তার বেশি হলে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কারণ এই অবস্থায় বাতাস প্রায় সম্পূর্ণ স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায় এবং অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ঘনীভবন হয়ে জলকণায় পরিণত হয়। তখন মেঘ থেকে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। তবে বৃষ্টির জন্য আদ্রতার পাশাপাশি তাপমাত্রা, বায়ুর চাপ ও স্থানীয় আবহাওয়া পরিস্থিতিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।