ঋণ কি | তড়িৎ ঋণাত্মকতা কাকে বলে | ঋণ কত প্রকার ও কি কি

মানবজীবনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ঋণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীন ধারণা। ব্যক্তি, পরিবার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি রাষ্ট্র পর্যন্ত আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে নানা সময়ে ঋণের উপর নির্ভর করে। ঋণ হচ্ছে এমন একটি আর্থিক সাহায্য, যা নির্দিষ্ট সময় পরে সুদসহ বা সুদ ছাড়া ফেরত দেওয়ার চুক্তিতে প্রদান করা হয়। আধুনিক অর্থনীতিতে ব্যাংক, এনজিও, কিংবা সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নানা ধরনের ঋণ নেওয়া হয় যেমন: গৃহঋণ, শিক্ষাঋণ, কৃষিঋণ, ব্যবসায়িক ঋণ ইত্যাদি। একদিকে ঋণ দারিদ্র্য থেকে উত্তরণে সাহায্য করতে পারে, অন্যদিকে অপব্যবহার বা অযথা ঋণ গ্রহণ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণও হতে পারে। ইসলামিক অর্থনীতিতে সুদবিহীন ঋণের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, যেখানে পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ঋণের উপকারিতা, ঝুঁকি ও সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা প্রতিটি সচেতন নাগরিকের জন্য অপরিহার্য।

ঋণ কি | তড়িৎ ঋণাত্মকতা কাকে বলে | ঋণ কত প্রকার ও কি কি

ঋণ কি

ঋণ হলো একটি আর্থিক লেনদেন, যেখানে একজন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা অন্য একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ধার নেয় এবং পরবর্তীতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এই অর্থ ফেরত দেওয়ার সময় সুদসহ ফেরত দিতে হয়। ঋণ সাধারণত প্রয়োজনের সময় আর্থিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

কৃষি ঋণ কি

কৃষি ঋণ হলো কৃষকদের কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহের একটি ব্যবস্থা, যা ব্যাংক, এনজিও বা সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রদান করা হয়। এই ঋণ দিয়ে কৃষক বীজ, সার, কীটনাশক, কৃষিযন্ত্র, সেচ বা চাষের অন্যান্য খরচ মেটাতে পারে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি আর্থিক সহায়তা।

ক্ষুদ্র ঋণ কি

ক্ষুদ্র ঋণ হলো দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য দেওয়া স্বল্প পরিমাণের ঋণ, যা সাধারণত ব্যক্তিগত উদ্যোগ, ক্ষুদ্র ব্যবসা বা আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়। এই ঋণ মূলত ব্যাংক নয়, বরং এনজিও বা মাইক্রোক্রেডিট প্রতিষ্ঠান যেমন গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক ইত্যাদি দিয়ে থাকে। এতে জামানতের প্রয়োজন হয় না এবং এটি দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক।

খেলাপি ঋণ কি

খেলাপি ঋণ হলো এমন একটি ঋণ যা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণগ্রহীতা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঋণের কিস্তি বা পুরো অর্থ বারবার নির্ধারিত সময়ের বাইরে ফেলে দিলে সেটি খেলাপি ঋণ হিসেবে চিহ্নিত হয়। এটি ব্যাংকিং খাতে এক বড় সমস্যা, যা আর্থিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে।

ঋণ কত প্রকার ও কি কি

আধুনিক সমাজে অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণে ঋণের গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, এমনকি রাষ্ট্র পর্যন্ত নানা সময়ে আর্থিক সংকট মোকাবিলায় ঋণের উপর নির্ভর করে থাকে। তবে সব ঋণ এক ধরনের নয়। উদ্দেশ্য, পরিশোধের পদ্ধতি এবং উৎসের ভিত্তিতে ঋণ বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত। এই প্রবন্ধে আমরা ঋণের প্রধান প্রকারভেদসমূহ নিয়ে আলোচনা করব।

১. ব্যক্তিগত ঋণ (Personal Loan)

এই ধরনের ঋণ ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত প্রয়োজন পূরণের জন্য গ্রহণ করে, যেমন গৃহনির্মাণ, উচ্চশিক্ষা, চিকিৎসা, বিয়ে বা ভ্রমণ। সাধারণত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময় ও সুদের হারে এই ঋণ প্রদান করে। ব্যক্তি তার উপার্জনের ভিত্তিতে এ ঋণ পরিশোধ করে থাকে।

২. ব্যবসায়িক ঋণ (Business Loan)

ব্যবসা পরিচালনা, সম্প্রসারণ, যন্ত্রপাতি কেনা, মূলধন বাড়ানো বা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই ঋণ নেওয়া হয়। এটি ট্রেড ঋণ, ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ বা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ঋণ হিসেবে বিভক্ত হতে পারে। ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করে।

৩. কৃষি ঋণ (Agricultural Loan)

কৃষকেরা চাষাবাদ, সেচ, বীজ, সার, কীটনাশক ও কৃষিযন্ত্র কেনার জন্য যে ঋণ গ্রহণ করে, তা কৃষি ঋণ নামে পরিচিত। এই ঋণ সাধারণত মৌসুমি ভিত্তিতে দেওয়া হয় এবং ফসল ঘরে ওঠার পর তা পরিশোধ করতে হয়। অনেক সময় কৃষকদের স্বল্প সুদে বা সুদমুক্ত ঋণও দেওয়া হয়।

৪. ক্ষুদ্র ঋণ (Microcredit)

দরিদ্র ও সীমিত আয়ভুক্ত মানুষদের আত্মকর্মসংস্থান ও ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার জন্য যে স্বল্প পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয়, তা ক্ষুদ্র ঋণ নামে পরিচিত। এই ঋণ সাধারণত জামানত ছাড়া প্রদান করা হয় এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৫. সরকারি ও বেসরকারি ঋণ

সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ইত্যাদি এবং বেসরকারি ব্যাংক বা এনজিও যেমন ব্র্যাক, আশার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার ঋণ প্রদান করা হয়। উৎস অনুযায়ী এগুলোকে সরকারি বা বেসরকারি ঋণ বলা হয়।

ঋণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক হাতিয়ার। সঠিকভাবে ব্যবহার করা গেলে ঋণ ব্যক্তি ও সমাজের উন্নয়নে বড় অবদান রাখতে পারে। তবে অযথা ঋণ গ্রহণ বা সময়মতো পরিশোধ না করলে তা ব্যক্তিগত ও জাতীয় অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা সহকারে ঋণ গ্রহণ ও ব্যবহার করা প্রয়োজন।

তড়িৎ ঋণাত্মকতা কাকে বলে

তড়িৎ ঋণাত্মকতা (Electronegativity) হলো একটি পরমাণুর সেই ক্ষমতা যার দ্বারা তা কোন যৌগে থাকা অবস্থায় তার সংযুক্ত ইলেকট্রনগুলিকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। এটি একটি আপেক্ষিক মান, যার মাধ্যমে বোঝা যায় কোন পরমাণু ইলেকট্রনের প্রতি কতটা আকর্ষণ ক্ষমতা রাখে। ফ্লোরিনের তড়িৎ ঋণাত্মকতা সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশের মাথাপিছু ঋণ কত 

বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ কত

ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি

বাংলাদেশে ব্যাংক ঋণ অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, যার মাধ্যমে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তারা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারেন। তবে অনেক সময় দেখা যায়, ঋণগ্রহীতারা সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিশোধ না করে "খেলাপি" হয়ে পড়েন। এ ধরনের ঋণ খেলাপি শুধু একটি ব্যাংক ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্তই করে না, বরং সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই ঋণ পরিশোধ না করলে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।

প্রথমত, যখন কেউ নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ করেন না, তখন সেই ঋণকে ‘সাব-স্ট্যান্ডার্ড’, ‘ডাউটফুল’ এবং ‘লস’ হিসেবে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ৩ মাস পর ঋণ সাব-স্ট্যান্ডার্ড, ৬ মাসে ডাউটফুল এবং ১২ মাস পর লস হিসেবে চিহ্নিত হয়। এই শ্রেণিকরণ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ আর্থিক চাপে ভোগে এবং গ্রাহকের ওপর অতিরিক্ত জরিমানা ও সুদের চাপ সৃষ্টি হয়।

দ্বিতীয়ত, যেসব ঋণগ্রহীতা ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ পরিশোধ বন্ধ রাখেন, তাদের ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যেমন: বিদেশ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা, ট্রেড লাইসেন্স ও ব্যবসায়িক নিবন্ধনের অনুমতি বন্ধ, ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা, এবং প্রয়োজনে ফৌজদারি মামলার সম্মুখীন হওয়া।

তৃতীয়ত, যেসব ঋণের বিপরীতে জামানত রাখা আছে, সে জামানত বাজেয়াপ্ত করে বা নিলামে বিক্রি করে ব্যাংক বকেয়া টাকা আদায় করতে পারে। আবার অনেক সময় ঋণগ্রহীতাকে আদালতের মাধ্যমে সমন জারি ও সম্পত্তি জব্দ করার পথেও যেতে হয়।

এছাড়াও, খেলাপি ঋণগ্রহীতার নাম বাংলাদেশ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় ডেটাবেইসে রেকর্ড হয়ে যায়, যার ফলে ভবিষ্যতে অন্য কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

সার্বিকভাবে বলা যায়, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার পরিণাম শুধু আর্থিক জরিমানাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক এবং সামাজিক জীবনে বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলে। তাই প্রতিটি ঋণগ্রহীতার উচিত সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করে ব্যাংকিং খাতের প্রতি আস্থা বজায় রাখা এবং অর্থনীতির উন্নয়নে সহযোগিতা করা।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url