বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত সময় লাগে
আমেরিকা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য উচ্চশিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা, ভ্রমণ কিংবা স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে হাজারো মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে যান। কিন্তু অনেকেরই প্রথম প্রশ্ন থাকে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত সময় লাগে? সরাসরি ফ্লাইট আছে কি না, ট্রানজিট কোথায় হয়, মোট ভ্রমণে কত ঘণ্টা লাগতে পারে এসব বিষয় জানা থাকলে ভ্রমণ পরিকল্পনা অনেক সহজ হয়। এই আর্টিকেলে আমরা এসব প্রশ্নের বিস্তারিত ও বাস্তব সম্মত উত্তর তুলে ধরব।
আমেরিকায় যেতে কি কি লাগে
আমেরিকা বিশ্বের অন্যতম উন্নত ও জনপ্রিয় দেশ। পড়াশোনা, ভ্রমণ, চাকরি কিংবা স্থায়ীভাবে বসবাস বিভিন্ন কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার বাংলাদেশি আমেরিকায় যেতে আগ্রহী হন। তবে আমেরিকায় যাওয়ার প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে কঠোর এবং নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম ও ডকুমেন্ট অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। সঠিক প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলে ভিসা প্রত্যাখ্যানের ঝুঁকি থাকে। এই আর্টিকেলে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় যেতে কি কি লাগে, তা ধাপে ধাপে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
বৈধ পাসপোর্ট
আমেরিকায় যেতে হলে অবশ্যই একটি মেশিন রিডেবল বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে।
পাসপোর্টের মেয়াদ ভ্রমণের পর কমপক্ষে ৬ মাস বৈধ থাকতে হবে
পুরনো পাসপোর্ট থাকলে সেটিও সঙ্গে রাখা ভালো
আমেরিকার ভিসা
আমেরিকায় প্রবেশের জন্য ভিসা বাধ্যতামূলক। উদ্দেশ্য অনুযায়ী ভিসার ধরন আলাদা হয়।
জনপ্রিয় ভিসা ক্যাটাগরি
B1/B2 – ট্যুরিস্ট ও বিজনেস ভিসা
F1 – স্টুডেন্ট ভিসা
J1 – এক্সচেঞ্জ ভিজিটর
H1B – ওয়ার্ক ভিসা
CR1/IR1 – ইমিগ্র্যান্ট ভিসা
আমেরিকা যেতে কি কি কাগজ লাগে
DS-160 ফর্ম পূরণ
DS-160 হলো আমেরিকার ভিসা আবেদন ফর্ম।
অনলাইনে ইংরেজিতে পূরণ করতে হয়
সঠিক তথ্য দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
ফর্ম সাবমিট করার পর Confirmation Page প্রিন্ট করতে হয়
ভিসা ইন্টারভিউ অ্যাপয়েন্টমেন্ট
বাংলাদেশে আমেরিকার ভিসা ইন্টারভিউ হয় ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে।
অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে হয়
নির্ধারিত তারিখে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক
আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ
আপনি আমেরিকায় থাকার খরচ বহন করতে পারবেন—এটি প্রমাণ করা জরুরি।
ব্যাংক স্টেটমেন্ট
স্পনসর লেটার (যদি থাকে)
আয় সনদ / ট্যাক্স ডকুমেন্ট
ভ্রমণের উদ্দেশ্যের প্রমাণ
ভিসা অফিসারকে পরিষ্কারভাবে বোঝাতে হবে আপনি কেন আমেরিকায় যাচ্ছেন।
ট্যুরিস্ট হলে: ট্রাভেল প্ল্যান
স্টুডেন্ট হলে: I-20, ইউনিভার্সিটি অফার লেটার
আত্মীয়ের কাছে গেলে: ইনভাইটেশন লেটার
ব্যক্তিগত ও পেশাগত কাগজপত্র
চাকরির সনদ / ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স
শিক্ষাগত সার্টিফিকেট
জাতীয় পরিচয়পত্র
আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে কি কি লাগে
উচ্চমানের শিক্ষা ব্যবস্থা, বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার সুযোগের কারণে আমেরিকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। তবে আমেরিকায় পড়াশোনা করতে হলে প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো স্টুডেন্ট ভিসা (F-1) সংগ্রহ করা। এই ভিসা পেতে নির্দিষ্ট কিছু ডকুমেন্ট, আর্থিক প্রমাণ এবং ভিসা ইন্টারভিউ সফলভাবে সম্পন্ন করতে হয়।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সাধারণত যে ভিসাটি লাগে
F-1 Student Visa → একাডেমিক পড়াশোনার জন্য (University, College, School)
M-1 → ভোকেশনাল বা টেকনিক্যাল কোর্সের জন্য (কম ব্যবহৃত)
এই আর্টিকেলে আমরা মূলত F-1 ভিসা নিয়ে আলোচনা করছি।
স্টুডেন্ট ভিসার জন্য প্রধান যোগ্যতা
আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে—
USA-র SEVP approved কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হবে
ফুল-টাইম স্টুডেন্ট হিসেবে পড়াশোনা করতে হবে
পড়াশোনার খরচ বহন করার আর্থিক সামর্থ্য থাকতে হবে
পড়াশোনা শেষে দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রমাণ করতে হবে
আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসার জন্য যে কাগজপত্র লাগে
১. I-20 ফর্ম
বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে ইস্যু করা
স্টুডেন্ট ভিসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট
২. পাসপোর্ট
কমপক্ষে ৬ মাসের বৈধতা থাকতে হবে
পুরনো পাসপোর্ট থাকলে সেটিও সঙ্গে নিতে হয়
৩. DS-160 ফর্ম
অনলাইনে পূরণ করতে হয়
ভিসা আবেদন ফর্ম
৪. SEVIS ফি রসিদ
সাধারণত $350 USD
I-20 পাওয়ার পর পরিশোধ করতে হয়
৫. ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট কনফার্মেশন
US Embassy Dhaka-র অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রিন্ট কপি
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত সময় লাগে
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে সাধারণত ১৮ ঘণ্টা থেকে ৩০ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে। এই সময় নির্ভর করে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর
ফ্লাইটটি সরাসরি নাকি ট্রানজিটসহ
কোন শহরে যাচ্ছেন (নিউইয়র্ক, শিকাগো, লস অ্যাঞ্জেলেস ইত্যাদি)
ট্রানজিটের সংখ্যা ও অপেক্ষার সময়
এয়ারলাইন্স ও রুট
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার কোনো সরাসরি ফ্লাইট নেই, তাই এক বা একাধিক ট্রানজিট করেই যেতে হয়।
সরাসরি ফ্লাইট আছে কি
না, বর্তমানে ঢাকা (Hazrat Shahjalal International Airport) থেকে আমেরিকার কোনো শহরে সরাসরি ফ্লাইট চালু নেই। এজন্য যাত্রীদের মধ্যপ্রাচ্য বা ইউরোপের কোনো দেশে ট্রানজিট করতে হয়।
ট্রানজিটসহ ফ্লাইটে সময় কত লাগে
ট্রানজিটসহ ফ্লাইটে সময় সাধারণত নিচের মতো হয়
১টি ট্রানজিট: ১৮–২২ ঘণ্টা
২টি ট্রানজিট: ২২–৩০ ঘণ্টা বা তার বেশি
ট্রানজিট সময় ২ ঘণ্টা থেকে ৮–১০ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে, যা মোট ভ্রমণ সময়কে অনেক বাড়িয়ে দেয়।
জনপ্রিয় ট্রানজিট রুট ও সময়
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে যেসব ট্রানজিট রুট বেশি ব্যবহৃত হয়—
মধ্যপ্রাচ্য রুট
ঢাকা → দুবাই → নিউইয়র্ক
ঢাকা → দোহা → শিকাগো
ঢাকা → ইস্তাম্বুল → লস অ্যাঞ্জেলেস
এই রুটে সাধারণত ১৮–২৪ ঘণ্টা সময় লাগে।
ইউরোপ রুট
ঢাকা → লন্ডন → নিউইয়র্ক
ঢাকা → ফ্রাঙ্কফুর্ট → শিকাগো
ইউরোপ রুটে সময় একটু বেশি হয়, প্রায় ২০–৩০ ঘণ্টা।
কোন আমেরিকান শহরে যেতে কত সময় লাগে
গন্তব্য শহরের ওপরও ভ্রমণ সময় নির্ভর করে
নিউইয়র্ক: ১৮–২৪ ঘণ্টা
শিকাগো: ১৯–২৫ ঘণ্টা
লস অ্যাঞ্জেলেস: ২২–৩০ ঘণ্টা
ডালাস / হিউস্টন: ২০–২৭ ঘণ্টা
পশ্চিমাঞ্চলের শহরগুলোতে যেতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে।
কোন এয়ারলাইন্সে সময় কম লাগে
সময়ের দিক থেকে যেসব এয়ারলাইন্স ভালো ধরা হয়—
Qatar Airways
Emirates
Turkish Airlines
Etihad Airways
Singapore Airlines
এই এয়ারলাইন্সগুলোর ট্রানজিট সময় সাধারণত কম এবং কানেকশন ফ্লাইট ভালোভাবে ম্যানেজ করা হয়।
ভ্রমণের সময় কমানোর টিপস
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কম সময় লাগাতে চাইলে
এক ট্রানজিটের ফ্লাইট বেছে নিন
ট্রানজিট সময় ২–৪ ঘণ্টার মধ্যে রাখুন
জনপ্রিয় এয়ারলাইন্স ব্যবহার করুন
রাতের ফ্লাইট এড়িয়ে চলুন (দীর্ঘ অপেক্ষা হতে পারে)
সব মিলিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে গড়ে ১৮ থেকে ৩০ ঘণ্টা সময় লাগে। সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় ট্রানজিটই সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। সঠিক রুট, ভালো এয়ারলাইন্স ও কম ট্রানজিট সময় বেছে নিতে পারলে আপনার দীর্ঘ ভ্রমণ অনেকটাই আরামদায়ক ও সময়সাশ্রয়ী হবে।
