ডিএনএ ও আরএনএ এর মধ্যে পার্থক্য কি
জীববিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুইটি অণু হল ডিএনএ ও আরএনএ এগুলোকে বলা হয় নিউক্লিক অ্যাসিড, যা প্রত্যেক জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ, সংরক্ষণ ও প্রজন্মান্তরে স্থানান্তর করার কাজ করে। যদিও এই দুই অণুর কাজ অনেক ক্ষেত্রে পরস্পর-সম্পর্কিত, তবুও তাদের গঠন, কার্যপ্রণালী ও অবস্থানে রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য। জীবনের মৌলিক প্রক্রিয়া বোঝার জন্য এই দুইয়ের পার্থক্য জানা অত্যন্ত জরুরি।
নিচে ডিএনএ ও আরএনএ সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করা হলো
ডিএনএ ও আরএনএ পূর্ণরূপ ও পরিচিতি
ডিএনএ
ডিএনএ হলো সেই অণু যা জীবের জেনেটিক তথ্য বহন করে। মানুষের ত্বক, রক্ত, হাড়, পেশি—প্রায় সব কোষেই ডিএনএ থাকে। জীবের বৈশিষ্ট্য যেমন চোখের রং, উচ্চতা, চুলের ধরন—এসবই ডিএনএ দ্বারা নির্ধারিত।
আরএনএ
আরএনএ হলো ডিএনএ এর সংরক্ষিত তথ্যকে কাজে লাগিয়ে প্রোটিন তৈরির নির্দেশনা বহন করার অণু। আরএনএ ছাড়া কোনো কোষ প্রোটিন তৈরি করতে পারে না। তাই আরএনএ জীবনের দৈনন্দিন কার্যকলাপ পরিচালনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডিএনএ ও আরএনএ গঠনগত পার্থক্য
ডিএনএ ও আরএনএ– এর গঠনগত পার্থক্যই তাদের কাজের বৈচিত্র্য তৈরি করে।
ডিএনএ এর গঠন
-
ডিএনএ হলো একটি ডাবল হেলিক্স বা দ্বি-সর্পিল গঠনবিশিষ্ট অণু।
-
এতে দুটি লম্বা শৃঙ্খলা থাকে যা পরস্পর পাক খেয়ে সর্পিল আকার ধারণ করে।
-
এর সুগার অংশ হলো ডিঅক্সিরাইবোজ, যার কারণে এর নাম “ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড”।
-
ডিএনএ-তে চারটি নাইট্রোজেন বেস থাকে:
A (Adenine), T (Thymine), C (Cytosine), G (Guanine) -
ডিএনএ অত্যন্ত স্থিতিশীল এবং সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
আরএনএ এর গঠন
-
আরএনএ হলো সিঙ্গল-স্ট্র্যান্ডেড বা একক সুতা বিশিষ্ট অণু।
-
এর সুগার অংশ হলো রাইবোজ।
-
এটির বেস হলো:
A (Adenine), U (Uracil), C (Cytosine), G (Guanine) -
এখানে ডিএনএ-এর T-এর পরিবর্তে U ব্যবহৃত হয়।
-
এটি তুলনামূলকভাবে কম স্থায়ী এবং সহজে ভেঙে যেতে পারে।
ডিএনএ ও আরএনএ এর অবস্থান
ডিএনএ কোথায় থাকে
-
অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াস বা কোষকেন্দ্রে থাকে।
-
কিছু পরিমাণ ডিএনএ মাইটোকন্ড্রিয়া (এবং উদ্ভিদে ক্লোরোপ্লাস্ট)–এও থাকে।
-
ডিএনএ সাধারণত কোষে স্থির অবস্থায় থাকে এবং কোষ বিভাজনের সময় দ্বিগুণ হয়।
আরএনএ কোথায় থাকে
-
নিউক্লিয়াস, সাইটোপ্লাজম, রাইবোজোম কোষের প্রায় সর্বত্র থাকে।
-
আরএনএ চলমান বা কার্যকরী কাজের সাথে যুক্ত থাকায় এটি কোষের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকে।
ডিএনএ ও আরএনএ কাজের পার্থক্য
ডিএনএ এর কাজ
-
জীবের বংশগত তথ্য সংরক্ষণ করা।
-
প্রজন্মান্তরে জেনেটিক তথ্য স্থানান্তর করা।
-
কোষ বিভাজনের সময় নিজের অনুলিপি তৈরি করা (Replication)।
-
জীবের বৃদ্ধি, বিকাশ, বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা।
আরএনএ এর কাজ
-
ডিএনএ থেকে প্রাপ্ত নির্দেশ বের করে এনে প্রোটিন তৈরি করা।
-
কোষের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তাৎক্ষণিক তথ্য হস্তান্তর ও কার্যসম্পাদনে কাজ করে।
-
এর তিনটি প্রধান ধরন—
-
mRNA: ডিএনএ থেকে তথ্য নিয়ে রাইবোজোমে পৌঁছে দেয়
-
tRNA: অ্যামিনো অ্যাসিড নিয়ে রাইবোজোমে আসে
-
rRNA: রাইবোজোম তৈরি করতে সাহায্য করে
-
স্থায়িত্ব এবং টিকে থাকার ক্ষমতা
-
ডিএনএ অত্যন্ত স্থিতিশীল; হাজার বছর পরেও ডিএনএ শনাক্ত করা যায় (যেমন: ফসিল বিশ্লেষণ)।
-
আরএনএ খুব কম স্থায়ী; সামান্য তাপ বা রাসায়নিক পরিবর্তনেও ভেঙে যায়।
-
এই স্থায়িত্বের কারণে ডিএনএ-ই তথ্য সংরক্ষণে প্রধান ভূমিকা পালন করে।
সংখ্যা ও বৈচিত্র্য
-
একটি কোষে সাধারণত একটি ডিএনএ জিনোম থাকে।
-
কিন্তু কোষে হাজার হাজার আরএনএ থাকে, এবং এদের প্রকারভেদও বেশি।
সংক্ষেপে প্রধান পার্থক্য
| বিষয় | ডিএনএ | আরএনএ |
|---|---|---|
| গঠন | ডাবল হেলিক্স | সিঙ্গল স্ট্র্যান্ড |
| সুগার | ডিঅক্সিরাইবোজ | রাইবোজ |
| বেস | A, T, C, G | A, U, C, G |
| অবস্থান | নিউক্লিয়াস | নিউক্লিয়াস, সাইটোপ্লাজম |
| কাজ | জেনেটিক তথ্য সংরক্ষণ | প্রোটিন তৈরির নির্দেশ বহন |
| স্থায়িত্ব | বেশি | কম |
| সংখ্যা | সাধারণত একটাই | অনেক |
ডিএনএ জীবনের নকশা তৈরি করে অর্থাৎ জীবের বৈশিষ্ট্য কী হবে তা নির্ধারণ করে। আর আরএনএ হলো সেই নকশা অনুযায়ী কোষে প্রোটিন তৈরির কারিগর। ডিএনএ-কে বলা যায় পরিকল্পনাকারী, আর আরএনএ হলো বাস্তবায়নকারী। তাই জীবন্ত কোষ পরিচালনার জন্য এদের উভয়ের ভূমিকা অপরিহার্য।