জীবাত্মা ও পরমাত্মার মধ্যে পার্থক্য কি?
হিন্দুধর্ম ও আধ্যাত্মিক দর্শনে জীবাত্মা এবং পরমাত্মা দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। মানুষ, প্রাণীসহ প্রত্যেক সত্তার ভেতরে যে চৈতন্য বা আত্মা রয়েছে তাকে বলা হয় জীবাত্মা। আর সমগ্র সৃষ্টি জগতের উৎস, নিয়ন্তা ও সর্বব্যাপী চৈতন্যশক্তিকেই বলা হয় পরমাত্মা। এ দুটি ধারণা একই ধারার হলেও তাদের প্রকৃতি, শক্তি, অস্তিত্ব ও ক্ষমতার দিক থেকে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
জীবাত্মা কি
জীবাত্মা হলো ব্যক্তিগত আত্মা যে চৈতন্য শক্তি একটি দেহে অবস্থান করে এবং সেই দেহকে সচল রাখে। প্রতিটি জীবের ভেতরেই জীবাত্মা থাকে এবং মৃত্যুর পর শরীর নষ্ট হলেও জীবাত্মার ক্ষয় হয় না। হিন্দু দর্শন মতে, কর্মফল অনুযায়ী জীবাত্মা বারবার জন্ম মৃত্যুর চক্রে ঘুরে বেড়ায়।
জীবাত্মার বৈশিষ্ট্য
-
ব্যক্তিগত ও সীমিত শক্তির অধিকারী
-
দেহের সাথে আবদ্ধ
-
কর্মফলের অধীন
-
মায়া, দুঃখ, সুখ—সব অনুভূতির প্রভাব পড়ে
-
মুক্তি পেতে সাধনা প্রয়োজন
পরমাত্মা কি
পরমাত্মা হলো সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ ও সর্বব্যাপী আত্মা বা চূড়ান্ত সত্তা। যিনি সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের নিয়ন্ত্রক। পরমাত্মা কারো দেহে আবদ্ধ নন; তিনি সর্বত্র বিরাজমান। পরমাত্মা অপরিবর্তনীয়, অসীম, চিরন্তন এবং সর্বজ্ঞানী।
পরমাত্মার বৈশিষ্ট্য
-
অসীম শক্তির অধিকারী
-
সর্বত্র বিদ্যমান
-
জন্ম–মৃত্যুর ঊর্ধ্বে
-
কার্মিক ফলের প্রভাব নেই
-
চিরন্তন, অবিনশ্বর ও সর্বজ্ঞ
জীবাত্মা ও পরমাত্মার মধ্যে পার্থক্য কি
১. অস্তিত্ব:
জীবাত্মা সীমিত এবং একটি দেহে অবস্থান করে, আর পরমাত্মা সর্বত্র একইভাবে উপস্থিত।
২. শক্তি ও ক্ষমতা:
জীবাত্মা সীমাবদ্ধ, মায়া ও কর্মফল দ্বারা প্রভাবিত; পরমাত্মা সর্বশক্তিমান ও অপ্রভাবিত।
৩. জন্ম-মৃত্যু:
জীবাত্মা জন্ম-মৃত্যু ও পুনর্জন্মের চক্রে আবদ্ধ থাকে; পরমাত্মা জন্ম-মৃত্যুর ঊর্ধ্বে।
৪. জ্ঞান:
জীবাত্মার জ্ঞান সীমিত; পরমাত্মা সর্বজ্ঞ ও সর্বদ্রষ্টা।
৫. সম্পর্ক:
হিন্দু দর্শন মতে জীবাত্মা পরমাত্মার একটি অষ্টাংশ বা স্পার্ক, অর্থাৎ উৎস হলো পরমাত্মা।
সারসংক্ষেপ
জীবাত্মা ব্যক্তিগত ও সীমিত চৈতন্য, যা দেহে অবস্থান করে এবং কর্মফলে আবদ্ধ। অন্যদিকে, পরমাত্মা হলো অসীম শক্তিধর চিরন্তন চেতনা, যিনি সমগ্র বিশ্বজগতের নিয়ন্ত্রক। জীবাত্মার লক্ষ্য হলো পরমাত্মার সাথে ঐক্যলাভ বা মুক্তি অর্জন করা। তাই জীবাত্মা ও পরমাত্মার পার্থক্য বোঝা আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও সাধনার একটি মৌলিক অংশ।