খতিয়ান ও পর্চার মধ্যে পার্থক্য কি
বাংলাদেশে জমি সংক্রান্ত নথিপত্রের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো খতিয়ান এবং পর্চা। জমির মালিকানা, দাগ নম্বর, জমির আয়তন, শ্রেণি, মৌজা ও অন্যান্য তথ্য যাচাই করতে এই দুটি নথির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সাধারণ মানুষের অনেকেই খতিয়ান ও পর্চার সঠিক পার্থক্য বুঝে উঠতে পারেন না। কেউ কেউ মনে করেন দু’টি একই জিনিস, কিন্তু বাস্তবে খতিয়ান এবং পর্চা দুই ধরনের নথি, যার উদ্দেশ্য ও ব্যবহার আলাদা। জমি লেনদেন, নামজারি, দলিল তৈরি বা জমির মালিকানা প্রমাণের ক্ষেত্রে এই দুটি নথির সঠিক ধারণা জানা অত্যন্ত প্রয়োজন।
খতিয়ান কী
খতিয়ান হলো জমির মূল সরকারি রেকর্ড, যা সরকার বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে প্রস্তুত করে। একটি খতিয়ানের মাধ্যমে জমির প্রকৃত মালিক কে, জমির পরিমাণ কত, দাগ নম্বর কী, শ্রেণি কী, এবং জমির অবস্থান কোথায় এসব মৌলিক তথ্য পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে প্রধানত কয়েক ধরনের খতিয়ান রয়েছে: সিএস (CS), এসএ (SA), আরএস (RS) এবং বিএস (BS) খতিয়ান। প্রতিটি খতিয়ান জরিপভেদে তৈরি হয় এবং সরকারের সংরক্ষিত মূল নথি হিসেবে থাকে।
খতিয়ান হলো জমির মালিকানা নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিল। কোনো জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে বা মালিকানা প্রমাণের প্রয়োজন হলে আদালতসহ সকল জায়গায় খতিয়ানকেই মূল প্রমাণ হিসেবে ধরা হয়।
পর্চা কী
পর্চা হলো খতিয়ানের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি একটি অফিসিয়াল কপি বা সার্টিফায়েড সারাংশ। এটি মূলত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জমির তথ্য যাচাই বা সাধারণ ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়। পর্চাকে অনেক সময় মিউটেশন পর্চা, হাল পর্চা বা e-Porcha বলা হয়।
অনেকে অনলাইনে জমির তথ্য যাচাই করার সময় পর্চার কপি সংগ্রহ করেন। পর্চা জমির তথ্য দেখার ও প্রাথমিক যাচাইয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটি আসল রেকর্ড নয়। এটি মূল খতিয়ান থেকে তৈরি হওয়া একটি তথ্যপ্রমাণ মাত্র।
খতিয়ান ও পর্চার পার্থক্য কি
-
খতিয়ান হলো জমির মূল সরকারি রেকর্ড, আর পর্চা হলো সেই রেকর্ডের কপি বা সারাংশ।
-
খতিয়ান সরকারি সংরক্ষিত দলিল; পর্চা মালিক বা আবেদনকারীকে প্রদত্ত নথি।
-
খতিয়ানের তথ্য আদালত, নামজারি বা মালিকানা নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ; পর্চা সাধারণ তথ্যপ্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
-
খতিয়ান তৈরি হয় জরিপের মাধ্যমে; পর্চা তৈরি হয় খতিয়ানের তথ্য থেকে।