খ্রিস্টাব্দ ও খ্রিস্টপূর্ব পার্থক্য কি
বিশ্ব ইতিহাসে সময় বা বছরের হিসাব করার দুটি মৌলিক পদ্ধতি হলো খ্রিস্টাব্দ এবং খ্রিস্টপূর্ব। সভ্যতার বিকাশ, প্রাচীন সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন, যুদ্ধ, প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার কিংবা ইতিহাসের যেকোনো ঘটনা কাল নির্ধারণের জন্য এই দু’টি শব্দ অতি গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ বর্তমানে যে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে, সেটিও এই সময় গণনার উপর ভিত্তি করে তৈরি। কিন্তু অনেকেই খ্রিস্টাব্দ ও খ্রিস্টপূর্বের সঠিক অর্থ, ব্যবহার এবং পার্থক্য বুঝতে পারেন না। যিশু খ্রিস্টের জন্মকে সময় গণনার কেন্দ্রবিন্দু ধরে এই দুই শব্দের উৎপত্তি। তাই সহজ ভাষায় এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানা প্রয়োজন।
খ্রিস্টাব্দ কি
খ্রিস্টাব্দ হলো যিশু খ্রিস্টের জন্মের পরবর্তী বছরগুলো নির্দেশ করার পদ্ধতি। “খ্রিস্টাব্দ” শব্দটির ইংরেজি রূপ A.D., যার পূর্ণরূপ Anno Domini, ল্যাটিন ভাষায় যার অর্থ “প্রভুর বছর” বা “যিশুর জন্মের পরের বছর”। আধুনিক সময়ে ধর্মীয় নিরপেক্ষতার জন্য অনেক দেশে CE (Common Era) বা “সাধারণ যুগ” শব্দ ব্যবহার করা হয়, যা বাস্তবে খ্রিস্টাব্দেরই আরেক নাম।
খ্রিস্টাব্দে সময় সামনে এগিয়ে যায়
যেমন: ১ খ্রিস্টাব্দ → ৫০০ খ্রিস্টাব্দ → ১০০০ খ্রিস্টাব্দ → ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।
এটাই আমাদের বর্তমান বিশ্বে ব্যবহৃত সময় গণনা পদ্ধতি। সমাজ, রাষ্ট্র, আইন, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি—সব ক্ষেত্রেই এই সংখ্যাগুলো ব্যবহৃত হয়।
খ্রিস্টপূর্ব কী
খ্রিস্টপূর্ব হলো যিশু খ্রিস্টের জন্মের পূর্ববর্তী সময় নির্দেশ করে। এর ইংরেজি রূপ B.C., যার অর্থ Before Christ। আধুনিক নন-রিলিজিয়াস বা নিরপেক্ষ রূপ BCE (Before Common Era) ব্যবহার করা হলেও মূল অর্থ একই থাকে।
খ্রিস্টপূর্ব বছরের হিসাব উল্টো দিকে কমতে থাকে
যেমন: ১০০০ খ্রিস্টপূর্ব → ৫০০ খ্রিস্টপূর্ব → ১০০ খ্রিস্টপূর্ব → ১ খ্রিস্টপূর্ব।
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো—সময় গণনায় ০ (শূন্য) সাল নেই। অর্থাৎ, ১ খ্রিস্টপূর্বের পরের বছর সরাসরি ১ খ্রিস্টাব্দ। এই বিশেষ নিয়ম ইতিহাসের তারিখ বোঝায় গুরুত্বপূর্ণ।
খ্রিস্টপূর্ব বছর সাধারণত প্রাচীন সভ্যতার সময়, মিশর, গ্রীস, রোম, সিন্ধু সভ্যতা, ব্যাবিলন, মেসোপটেমিয়া, প্রাচীন ভারত, চীনসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার সময় নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়।
খ্রিস্টাব্দ ও খ্রিস্টপূর্বের পার্থক্য কি
-
খ্রিস্টাব্দ হলো যিশু খ্রিস্টের জন্মের পরে সময় গণনা; খ্রিস্টপূর্ব হলো তাঁর জন্মের আগের সময়।
-
খ্রিস্টাব্দে বছর সামনে বাড়তে থাকে; খ্রিস্টপূর্বে বছর পেছনের দিকে কমতে থাকে।
-
বর্তমান গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার খ্রিস্টাব্দ ভিত্তিক, আর ইতিহাসের প্রাচীন সময় নির্ধারণে খ্রিস্টপূর্ব ব্যবহৃত হয়।
-
খ্রিস্টপূর্ব ও খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কোনো শূন্য বছর নেই—এটাই সময় গণনার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।