অভিকর্ষজ ত্বরণ কি | অভিকর্ষজ ত্বরণ কাকে বলে | অভিকর্ষজ ত্বরণের সূত্র
অভিকর্ষজ ত্বরণ (Gravitational Acceleration) হলো পদার্থবিজ্ঞানের একটি মৌলিক ধারণা, যা পৃথিবী বা অন্য যেকোনো গ্রহের অভিকর্ষবল দ্বারা বস্তুকে যে ত্বরণে নিচের দিকে টেনে আনা হয়, তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। পৃথিবীর পৃষ্ঠে এই ত্বরণের মান গড়ভাবে ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড² (m/s²)। অভিকর্ষজ ত্বরণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বহু ঘটনার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত—জিনিসপত্র নিচে পড়ে যাওয়া, নদীর পানি বয়ে যাওয়া, এমনকি চাঁদের চারপাশে পৃথিবীর ঘূর্ণনও এই বলের প্রভাবে ঘটে। এই প্রবন্ধে আমরা অভিকর্ষজ ত্বরণের ধারণা, এর উৎস, গাণিতিক ব্যাখ্যা, এবং বাস্তব জীবনে এর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
অভিকর্ষজ ত্বরণ কি
অভিকর্ষজ ত্বরণ (Gravitational Acceleration) হলো সেই ত্বরণ, যা কোনো বস্তু অভিকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে অর্জন করে। যখন কোনো বস্তুকে উপর থেকে ফেলা হয়, তখন সেটি পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের কারণে নিচের দিকে টেনে আনা হয়। এই টান বা আকর্ষণের ফলে বস্তুটির গতির হার প্রতি সেকেন্ডে বাড়তে থাকে—এই হারকেই অভিকর্ষজ ত্বরণ বলা হয়।
পৃথিবীর পৃষ্ঠে এই ত্বরণের গড় মান প্রায় ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড²। অর্থাৎ, যদি কোনো বস্তু নির্ভরতাহীনভাবে পড়ে, তবে প্রতি সেকেন্ডে তার বেগ ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড করে বাড়ে। তবে এই মান পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, যেমন: বিষুবরেখায় এর মান একটু কম এবং মেরু অঞ্চলে একটু বেশি, কারণ পৃথিবী পুরোপুরি গোল নয়, বরং একটু চ্যাপ্টা।
অভিকর্ষজ ত্বরণ শুধু পৃথিবীতেই নয়, অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহ, বা মহাকাশীয় বস্তুতেও থাকে, তবে সেখানে এর মান ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ, চাঁদে অভিকর্ষজ ত্বরণ পৃথিবীর ছয় ভাগের এক ভাগ মাত্র, যার কারণে সেখানে জিনিসপত্র অনেক হালকা মনে হয়।
এই ত্বরণ বিজ্ঞানের বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেমন: গতির সূত্র, প্রকল্পগত গতি, ও কৃত্রিম উপগ্রহ পরিচালনায় একটি মৌলিক ভূমিকা রাখে।
অভিকর্ষজ ত্বরণ বলতে কি বুঝায়
অভিকর্ষজ ত্বরণ বলতে বোঝায় সেই ত্বরণ, যা কোনো বস্তু অভিকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে অর্জন করে। যখন কোনো বস্তুকে উপর থেকে ফেলা হয় বা তা নিস্তরঙ্গভাবে পড়তে থাকে, তখন পৃথিবী তাকে নিজের কেন্দ্রীভূত বলের মাধ্যমে নিচের দিকে টানে। এই টানই বস্তুকে একটি নির্দিষ্ট হারে ত্বরণ প্রদান করে, যাকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলা হয়।
পৃথিবীর পৃষ্ঠে এই ত্বরণের গড় মান ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড², অর্থাৎ কোনো বস্তু নিস্তরঙ্গভাবে পড়লে প্রতি সেকেন্ডে তার বেগ ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড করে বাড়ে। এই ত্বরণ কেবল পৃথিবীতেই নয়, অন্য গ্রহ-উপগ্রহেও দেখা যায়, তবে সেখানে এর মান ভিন্ন হতে পারে।
সংক্ষেপে, অভিকর্ষজ ত্বরণ হলো সেই ত্বরণ, যা কোনো বস্তু অভিকর্ষ বলের কারণে নিচের দিকে চলতে গিয়ে অর্জন করে।
অভিকর্ষজ ত্বরণের মান কত
অভিকর্ষজ ত্বরণের গড় মান হলো ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড² (m/s²)। এর মানে হলো, যদি কোনো বস্তুকে নিস্তরঙ্গভাবে (বায়ুরোধ বা অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়া) মাটিতে ফেলা হয়, তবে প্রতি সেকেন্ডে তার বেগ ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড করে বাড়বে।
তবে এই মান সব জায়গায় একরকম নয়। পৃথিবীর আকার সামান্য চ্যাপ্টা হওয়ায়:
-
মেরু অঞ্চলে এর মান প্রায় ৯.৮৩ m/s²
-
বিষুবরেখায় এর মান প্রায় ৯.৭৮ m/s²
এই ভিন্নতার কারণ হলো পৃথিবীর ঘূর্ণন এবং ভূত্বকের উচ্চতার পার্থক্য।
অভিকর্ষজ ত্বরণ এর সূত্র
অভিকর্ষজ ত্বরণের মূল সূত্রটি নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র (Newton’s Law of Gravitation) থেকে পাওয়া যায়। সেই সূত্র অনুযায়ী অভিকর্ষজ ত্বরণের সূত্র হলো:
g = (G × M) / R²
এখানে,
g = অভিকর্ষজ ত্বরণ (m/s²)
G = মহাকর্ষ ধ্রুবক (Gravitational constant), যার মান ৬.৬৭ × ১০⁻¹¹ Nm²/kg²
M = পৃথিবীর ভর (Mass of the Earth), প্রায় ৫.৯৭ × ১০²⁴ kg
R = পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে বস্তুটির দূরত্ব বা পৃথিবীর ব্যাসার্ধ, প্রায় ৬.৩৭ × ১০⁶ m
এই সূত্র অনুযায়ী, পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণ g-এর মান নির্ভর করে পৃথিবীর ভর এবং ব্যাসার্ধের উপর। এই সূত্র ব্যবহার করেই আমরা পৃথিবীর পৃষ্ঠে g ≈ ৯.৮ m/s² পাই।
চাঁদে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান কত
চাঁদে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান হলো প্রায় ১.৬ মিটার/সেকেন্ড² (m/s²)।
এর মানে, যদি কোনো বস্তুকে চাঁদের উপর থেকে ফেলা হয়, তবে প্রতি সেকেন্ডে তার বেগ ১.৬ m/s করে বাড়বে। এটি পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণের প্রায় এক-ষষ্ঠাংশ (1/6), কারণ চাঁদের ভর পৃথিবীর তুলনায় অনেক কম এবং ব্যাসার্ধও ছোট। এই কারণে চাঁদে জিনিসপত্র অনেক হালকা মনে হয় এবং সেখানে মানুষ অনেক উঁচুতে লাফাতে পারে।
পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণের মান কত
পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণের গড় মান হলো ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড² (m/s²)। অর্থাৎ, কোনো বস্তু যদি নিস্তরঙ্গভাবে পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে পড়তে শুরু করে, তাহলে প্রতি সেকেন্ডে তার গতি ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড করে বাড়ে। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এই মান কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে — যেমন, মেরু অঞ্চলে প্রায় ৯.৮৩ m/s² এবং বিষুবরেখায় প্রায় ৯.৭৮ m/s²। এর কারণ হলো পৃথিবীর ঘূর্ণন এবং আকৃতির পার্থক্য।
মঙ্গল গ্রহের অভিকর্ষজ ত্বরণ কত
মঙ্গল গ্রহের অভিকর্ষজ ত্বরণের মান প্রায় ৩.৭ মিটার/সেকেন্ড² (m/s²)। অর্থাৎ মঙ্গলে কোনো বস্তু নিস্তরঙ্গভাবে পড়লে প্রতি সেকেন্ডে তার বেগ ৩.৭ মিটার/সেকেন্ড করে বৃদ্ধি পাবে। মঙ্গলের ভর এবং ব্যাসার্ধ পৃথিবীর থেকে অনেক কম হওয়ায় সেখানে অভিকর্ষজ ত্বরণও পৃথিবীর তুলনায় অনেক কম। তাই মঙ্গলে বস্তুপত্র তুলনামূলকভাবে হালকা মনে হয়।
অবশেষে বলা যায়, অভিকর্ষজ ত্বরণ হলো প্রকৃতির একটি মৌলিক বল যা পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহের কেন্দ্রীভূত টানে বস্তুগুলোকে নির্দিষ্ট ত্বরণের মাধ্যমে নিচের দিকে আকর্ষণ করে। পৃথিবীর পৃষ্ঠে এর গড় মান প্রায় ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড² হলেও অন্যান্য গ্রহ যেমন চাঁদ ও মঙ্গলে এর মান যথাক্রমে প্রায় ১.৬ এবং ৩.৭ মিটার/সেকেন্ড²। অভিকর্ষজ ত্বরণ না থাকলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক ঘটনার ধারাবাহিকতা অচল হয়ে যেতো। তাই এটি বিজ্ঞান ও প্রকৃতির গভীর একটি রহস্যময় উপাদান, যা আমাদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে বোঝার ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।