ওহি শব্দের অর্থ কি | ওহি কাকে বলে | প্রধান ওহি লেখক কে ছিলেন
ইসলাম ধর্মের অন্যতম মৌলিক বিশ্বাস হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের সঠিক পথের দিশা দিতে বিভিন্ন যুগে নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন এবং তাদের মাধ্যমে মানবজাতিকে হিদায়াত দিয়েছেন। এই হিদায়াতের মাধ্যমই হলো ওহি। ওহি একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো গোপন বার্তা, ইশারা, বা ইলহাম। ইসলামী পরিভাষায় ওহি বলতে বোঝানো হয়—আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর মনোনীত নবী বা রাসূলের নিকট প্রেরিত ঐশী বাণী, যা কোনো না কোনো মাধ্যমে তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এটি মানবজাতির জন্য আল্লাহর সর্বোচ্চ নির্দেশ ও হিদায়াতের উৎস।
ওহি মূলত মানব ইতিহাসের সেই মহৎ ধারার অংশ, যা আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে এক আধ্যাত্মিক ও জ্ঞানগত সেতুবন্ধন গঠন করে। এটি শুধুমাত্র কথাবার্তার সীমায় আবদ্ধ নয়; বরং ওহি একটি অলৌকিক যোগাযোগব্যবস্থা, যার মাধ্যমে আসমানী নির্দেশ পৃথিবীর একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির (নবী/রাসূল) হৃদয়ে পৌঁছে যায়। কুরআনুল কারীম, যা মুসলিম জাতির সর্বোচ্চ ধর্মীয় গ্রন্থ, সেটিও মূলত ওহির মাধ্যমেই হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়।
ওহি যে কেবল নবী-রাসূলদের জন্যই নির্দিষ্ট, তা নয়। কিছু ক্ষেত্রে ফেরেশতাদের মাধ্যমেও তা সংঘটিত হতে পারে। এমনকি ওহির একটি ধরন হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্তরে অনুভব করিয়ে দেওয়া, যাকে ইলহাম বলা হয়। তবে নবুয়তের ক্ষেত্রে যা ওহি নামে পরিচিত, তা সরাসরি আল্লাহর আদেশ এবং নবী বা রাসূলের কর্তব্য তা নির্ভুলভাবে মানবজাতির কাছে পৌঁছে দেওয়া।
সার্বিকভাবে ওহি শুধু ধর্মীয় জ্ঞান নয়; বরং এটি এক মহাসত্য, যার মাধ্যমে বিশ্ব মানবতা আলোর পথ খুঁজে পায়, সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা জানতে পারে এবং নৈতিকতার সর্বোচ্চ মানদণ্ড অর্জন করতে সক্ষম হয়। ইসলাম ধর্মের শিক্ষা, বিধান ও মূল্যবোধের ভিত্তি এই ওহির ওপরই প্রতিষ্ঠিত। তাই ওহি শুধু একটি আধ্যাত্মিক ধারণাই নয়, বরং মুসলিম জীবনের চালিকা শক্তি।
ওহি অর্থ কি
ওহি (وَحْي) শব্দের অর্থ হলো গোপন ইঙ্গিত, ইশারা, বার্তা, প্রেরণা অথবা অন্তরোদ্যোগে কথা পৌঁছে দেওয়া। আরবিতে এটি এমন একটি শব্দ, যার মাধ্যমে দ্রুত, গোপনে ও সরাসরি বার্তা পৌঁছে দেওয়া বোঝায়। ইসলামি পরিভাষায় এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীদের প্রতি পাঠানো ঐশী বাণী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
ওহি বলতে কী বুঝায়
ওহি বলতে বোঝায় আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নবী বা রাসূলের প্রতি গোপন বার্তা, নির্দেশনা বা বাণী প্রেরণ, যা বিশেষ মাধ্যমের (যেমন: ফেরেশতা, স্বপ্ন বা প্রত্যক্ষভাবে) মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হয়। এটি মানুষের হিদায়াত ও আল্লাহর বিধান জানিয়ে দেয়ার একটি অলৌকিক ও নির্ভুল পদ্ধতি।
হাদিস কোন ধরনের ওহি
হাদিস হলো وَحْيِ غَيْرِ مَتْلُو (ওহি গায়রে মাতলু) বা অপাঠ্য ওহি। এর অর্থ—এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল (সা.)-কে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কুরআনের মতো তা তিলাওয়াতযোগ্য বা কুরআনের অংশ নয়। হাদিসে রাসূল (সা.) আল্লাহর নির্দেশ, ব্যাখ্যা ও জীবনপদ্ধতি বর্ণনা করেছেন, যা কুরআনের ব্যাখ্যা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রধান ওহি লেখক কে ছিলেন
প্রধান ওহি লেখক ছিলেন হযরত জায়েদ ইবন সাবিত (রাঃ)। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ঘনিষ্ঠ সাহাবি এবং অত্যন্ত দক্ষ লেখক। নবীজি (সা.) যখন ওহি লাভ করতেন, তখন তিনি হযরত জায়েদ (রাঃ)-কে তা লিখে নিতে বলতেন। পরবর্তীতে হযরত আবুবকর (রাঃ) ও হযরত উসমান (রাঃ)-এর সময় কুরআন সংকলনের কাজেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
ওহি নিয়ে আসতেন কোন ফেরেশতা
ওহি নিয়ে আসতেন হযরত জিবরাইল (আঃ)। তিনি ছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহি পৌঁছানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ফেরেশতা। কুরআনের প্রতিটি আয়াত এবং রাসূল (সা.)-এর নবুয়তের পুরো সময়জুড়ে ওহি জিবরাইল (আঃ)-এর মাধ্যমেই নাজিল হতো। তিনি “রূহুল আমীন” ও “রসূলুন করীম” নামেও পরিচিত।
ওহি কী?
ওহি হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী ও রাসূলদের প্রতি প্রেরিত গোপন বার্তা বা ঐশী বাণী।
ওহি শব্দের অর্থ কী?
ওহি শব্দের অর্থ হলো ইঙ্গিত, গোপন বার্তা, ইলহাম বা প্রকাশ।
ইসলামী পরিভাষায় ওহি কী বোঝায়?
ইসলামী পরিভাষায় ওহি হলো আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট নবীর প্রতি পাঠানো নির্দেশ বা বাণী।
ওহি কাদের উপর নাজিল হয়?
ওহি কেবলমাত্র নবী ও রাসূলদের উপর নাজিল হয়।
ওহি কাদের মাধ্যমে আসে?
ওহি কখনও সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে, কখনও ফেরেশতা (জিবরাইল আঃ)-এর মাধ্যমে আসে।
জিবরাইল (আঃ) এর ভূমিকা কী ছিল ওহিতে?
জিবরাইল (আঃ) ছিলেন ওহি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা।
ওহির মাধ্যমে কী দেওয়া হয়?
ওহির মাধ্যমে আল্লাহর হুকুম, দিকনির্দেশনা, বিধি-বিধান এবং হিদায়াত প্রদান করা হয়।
কুরআন কী ওহি?
হ্যাঁ, কুরআনুল কারীম হলো ওহি, যা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উপর অবতীর্ণ হয়।
কুরআনের প্রথম ওহি কী ছিল?
"পড়ো তোমার প্রতিপালকের নামে"—(সূরা আলাক, আয়াত ১-৫) ছিল প্রথম ওহি।
ওহি কত প্রকার?
ওহি তিন প্রকার—প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ ও ফেরেশতার মাধ্যমে।
প্রত্যক্ষ ওহি বলতে কী বোঝায়?
যখন আল্লাহ সরাসরি নবীর সঙ্গে কথা বলেন, তখন তা প্রত্যক্ষ ওহি।
পরোক্ষ ওহি কীভাবে হয়?
আল্লাহ কখনও স্বপ্ন বা ইশারার মাধ্যমে বার্তা পৌঁছান, এটিই পরোক্ষ ওহি।
ফেরেশতার মাধ্যমে ওহি কীভাবে হয়?
জিবরাইল (আঃ) নবীর কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেন—এটিই ফেরেশতার মাধ্যমে ওহি।
ওহি কীভাবে অনুভব করতেন নবীরা?
ওহির সময় নবীরা তীব্র ভার অনুভব করতেন, ঘাম ঝরতো, শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন।
ওহি আসার সময় রাসূল (সা.)-এর কী অবস্থা হতো?
ওহির সময় তার শরীরে ভার পড়ে যেতো, মুখ লাল হয়ে যেতো, কখনো উটের পিঠেও ভার অনুভূত হতো।
ওহি কীভাবে সংরক্ষিত হয়েছে?
সাহাবিরা মুখে মুখে মুখস্থ করতেন এবং লিখে সংরক্ষণ করতেন।
সর্বশেষ ওহি কোনটি?
সূরা মায়িদার ৩নং আয়াত—"আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম।"
রাসূল (সা.)-এর জীবনে কত বছর ওহি আসে?
২৩ বছর ধরে ওহি নাজিল হয়।
ওহি বন্ধ হয়ে যাওয়াকে কী বলে?
একে ফুতুরে ওহি বা ওহির বিরতি বলা হয়।
ওহি বন্ধের ঘটনা কোথায় ঘটে?
প্রথম ওহির পর কিছুদিন ওহি বন্ধ ছিল, যা রাসূল (সা.)-কে চিন্তিত করেছিল।
ওহি আসা কবে শুরু হয়?
৪০ বছর বয়সে হেরা গুহায় প্রথম ওহি আসে।
ওহি কীভাবে প্রেরিত হতো?
স্বপ্ন, ফেরেশতা, শব্দ, আলো বা সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যমে।
ওহি ও ইলহামের মধ্যে পার্থক্য কী?
ইলহাম সাধারণ মুমিনের অন্তরে উদ্ভাসিত হয়, ওহি কেবল নবীদের জন্য নির্দিষ্ট।
মুসা (আঃ)-এর ক্ষেত্রে ওহি কেমন ছিল?
আল্লাহ তাআলা সরাসরি তার সাথে কথা বলেছেন, এটি সরাসরি ওহি।
ওহির জন্য বিশেষ কোনো স্থান নির্দিষ্ট ছিল কি?
না, ওহি বিভিন্ন স্থানে নাজিল হয়েছে, যেমন—হেরা গুহা, ঘর, রাস্তায় ইত্যাদি।
ওহির উদ্দেশ্য কী?
মানবজাতিকে সঠিক পথ দেখানো এবং আল্লাহর বিধান জানানো।
ওহি ছাড়া নবুয়ত সম্ভব কি?
না, ওহি ছাড়া কেউ নবী হতে পারে না।
কিয়ামতের পর আর ওহি আসবে কি?
না, নবুয়ত শেষ, আর কখনও ওহি আসবে না।
ওহি আসা বন্ধ হওয়ার কারণ কী?
রাসূল (সা.)-এর ইন্তিকালের মাধ্যমে নবুয়ত এবং ওহি বন্ধ হয়ে গেছে।
ওহির গুরুত্ব কী?
ওহি ছাড়া দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়।
ওহির মাধ্যমে কী পাওয়া যায়?
আল্লাহর হুকুম, শিক্ষা, আখলাক, জীবন বিধান পাওয়া যায়।
কোন নবীর ওপর সর্বপ্রথম ওহি আসে?
হযরত আদম (আঃ)-এর ওপর সর্বপ্রথম ওহি আসে।
ওহি সর্বপ্রথম কাকে দেওয়া হয়?
আদম (আঃ)-কে।
ওহির বিপরীত কী হতে পারে?
শয়তানের ওসওয়াসা বা মিথ্যা দাবিকৃত ওহি।
হাদীস কি ওহি?
রাসূল (সা.)-এর কিছু হাদীসও ওহির অন্তর্ভুক্ত, যাকে বলা হয় ওহি-গায়রে মাতলু।
ওহি-গায়রে মাতলু বলতে কী বোঝায়?
যা ওহি হিসেবে এসেছে কিন্তু কুরআনের অংশ নয়—এটি হাদীস।
ওহি-মাতলু কী?
যা ওহি হিসেবে নাজিল হয়েছে এবং কুরআনের অংশ।
কত ধরনের ওহি কুরআনে উল্লেখ আছে?
মোট সাতটি ভিন্নভাবে ওহি কুরআনে বর্ণিত হয়েছে।
নবী ছাড়া আর কেউ কি ওহি পায়নি?
হ্যাঁ, হযরত মারইয়াম ও হযরত মূসার মাকে ইলহাম দেওয়া হয়েছিল, সেটাও এক ধরনের ওহি।
ওহি কীভাবে প্রভাব ফেলে সমাজে?
ওহি সমাজে ন্যায়, নৈতিকতা, সত্য ও আলোর বার্তা ছড়িয়ে দেয়।
ওহি ছাড়া কেন নবুয়ত অসম্ভব?
কারণ ওহি হলো নবুয়তের মূল উৎস।
রাসূল (সা.) ওহি পাওয়ার পর কী করতেন?
তিনি তা মুখস্থ করতেন, সাহাবিদের পড়াতেন ও লিখিয়ে রাখতেন।
ওহির লিখন পদ্ধতি কেমন ছিল?
কখনো হাড়, খেজুরপাতা, চামড়া বা কাপড়ে লেখা হতো।
রাসূল (সা.) ওহি পাওয়ার সময় কেমন অনুভব করতেন?
তিনি কাঁপতেন, ভার অনুভব করতেন, চেহারা বিবর্ণ হতো।
ওহির প্রমাণ কী?
কুরআন ও সাহীহ হাদীস ওহির প্রামাণ্য দলিল।
ওহির ভাষা কী ছিল?
আরবি ভাষায় ওহি নাজিল হয়।
ওহি কি কেবল আরবি ভাষায়ই হয়?
না, পূর্ববর্তী নবীদের ওপর বিভিন্ন ভাষায় ওহি নাজিল হতো।
ওহির মাধ্যমে কী শিখা যায়?
আল্লাহর বিধান, হালাল-হারাম, নৈতিকতা, ঈমান ও আখিরাতের জ্ঞান।
ওহি ছাড়া আল্লাহকে চেনা যায় কি?
না, প্রকৃতভাবে আল্লাহর পরিচয় ওহির মাধ্যমেই জানা যায়।
ওহির মাধ্যমেই কেন কুরআন শ্রেষ্ঠ?
কারণ এটি আল্লাহর সরাসরি বাণী, সংরক্ষিত এবং সর্বশেষ ওহি।