অধ্যাপক গোলাম আযমের জীবনী pdf | গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
গোলাম আযম বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি শুধু ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে নয়, দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ও বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তবে একই সঙ্গে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক ও আন্তর্জাতিক অভিযোগও ছিল। এই আর্টিকেলে আমরা গোলাম আযমের জীবন, শিক্ষা, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, বিতর্ক, বিচার এবং মৃত্যুর তথ্য বিশদভাবে উপস্থাপন করছি।
গোলাম আযমের জীবনী জীবনী
গোলাম আযমের জন্ম ৭ নভেম্বর ১৯২২ সালে ব্রিটিশ ভারতের বাংলা রাজ্যের ঢাকার লক্সমীবাজারে। তার পিতা ছিলেন মাওলানা গোলাম কবীর এবং মাতা সায়েদা আশরফুন্নিসা। পরিবারটি ধর্মীয়ভাবে শিক্ষিত এবং বীরগাঁও গ্রামের ‘মাওলভী বাড়ি’ থেকে তাদের গোড়া।
গোলাম আযম শিক্ষাজীবন শুরু করেন কুমিল্লার হুচ্ছা মিয়া হাই মাদ্রাসা থেকে। পরে তিনি ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং আরবী, ইংরেজি ও রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিষয়ে BA পাশ করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি Political Science-এ MA সম্পন্ন করেন।
গোলাম আযমের নাগরিকত্ব
গোলাম আযম বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন। জন্ম ভারতের ব্রিটিশ ভারতের অধীনে হলেও স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তার রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডও মূলত বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংগঠিত হয়েছিল।
গোলাম আযমের পরিবার
গোলাম আযম ৭ নভেম্বর ১৯২২ সালে ঢাকার লক্সমীবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন মাওলানা গোলাম কবীর এবং মাতা ছিলেন সায়েদা আশরফুন্নিসা। তার পরিবার ধর্মীয় শিক্ষিত ও প্রথাগত ছিল। পরিবারের গোড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও গ্রামের ‘মাওলভী বাড়ি’ থেকে।
পরিবারে গোলাম আযমের পৈতৃক ও মাতৃক উভয় দিকেই ধর্মীয় শিক্ষার প্রভাব ছিল। এই পরিবেশে তিনি ছোটবেলা থেকে নৈতিক শিক্ষা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে পরিচিত হন।
গোলাম আযমের সন্তান
গোলাম আযমের ব্যক্তিগত জীবনে তার পরিবার ছিল ছোট ও সুশৃঙ্খল। বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী তার সন্তান ও নাতি-নাতনির সংখ্যা সীমিত, তবে তিনি পরিবারের প্রতি নিবেদিত ছিলেন। তার সন্তানরা মূলত গোপনীয়ভাবে জীবনযাপন করেছেন এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না।
গোলাম আযমের ছাত্রজীবন
গোলাম আযম ছাত্র জীবনে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। তিনি ১৯৪৭–৪৮ ও ১৯৪৮–৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের (DUCSU) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ছাত্র জীবনে তিনি ভাষা আন্দোলন ও রাজনীতি নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ২৭ নভেম্বর ১৯৪৮ সালে তিনি একটি স্মারকলিপি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে পেশ করেন, যেখানে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করার দাবি ছিল।
গোলাম আযমের পেশাগত জীবন
শিক্ষাজীবনে গোলাম আযম রংপুরের কারমাইকেল কলেজে রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। তিনি দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা ও নৈতিক দায়িত্ববোধের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। শিক্ষার পাশাপাশি তিনি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
গোলাম আযমের রাজনৈতিক জীবন
গোলাম আযম পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী ও পরবর্তীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের আমীর (নেতা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
গোলাম আযমের জীবন বিতর্কময়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তার অবস্থান ও কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে। ২০১২ সালে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (ICT) মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার হন। ২০১৩ সালে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই সময়ে তার রাজনৈতিক ও নৈতিক সিদ্ধান্তগুলো ব্যাপকভাবে আলোচনা ও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।
গোলাম আযমের মৃত্যু
গোলাম আযম ২৩ অক্টোবর ২০১৪ সালে ঢাকার বাঙবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে (বিএমইউ) মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। মৃত্যুর সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনি একটি বিতর্কিত কিন্তু অম্লান পরিচয় রেখে যান।
গোলাম আযম ছিলেন জটিল রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব। একদিকে তিনি ছাত্র রাজনীতি ও ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, অন্যদিকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তীতে তার অবস্থান নিয়ে বিতর্ক ও বিচার হয়। তাঁর জীবনের বিভিন্ন অধ্যায় বাংলাদেশের ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
গোলাম আযমের জীবন পাঠ করলে বোঝা যায় যে রাজনৈতিক, শিক্ষাগত এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে একাধিক বিতর্কও অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত হতে পারে।
গোলাম আযমের বই
গোলাম আযম বাংলাদেশের একজন বিতর্কিত রাজনৈতিক নেতা হলেও তিনি একজন প্রগতিশীল লেখক ও ইসলামি চিন্তাবিদ হিসেবেও পরিচিত। শিক্ষাব্যবস্থা, নৈতিকতা, ইসলামের বিধান এবং ধর্মীয় অনুশাসন নিয়ে তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই রচনা করেছেন।
গোলাম আযমের উল্লেখযোগ্য বই
-
জীবনে যা দেখলাম – প্রথম খণ্ড
-
এই বইতে তিনি তার জীবনের অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিবরণ দিয়েছেন।
-
-
জীবন্ত নামায
-
নামায ও ইসলামী আচরণ সম্পর্কে প্রাঞ্জল লেখা।
-
-
সহজ বাংলায় আল কুরআনের অনুবাদ – প্রথম খণ্ড
-
কুরআনের সহজ ও সাবলীল অনুবাদ ও তাফসীর।
-
-
শিক্ষাব্যবস্থার ইসলামী রূপরেখা
-
শিক্ষাব্যবস্থা ও নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা।
-
-
ঈমান ও আকীদা
-
ইসলামের মূলনীতি ও বিশ্বাসের ব্যাখ্যা।
-
গোলাম আযমের বইগুলো মূলত ইসলামী চিন্তাধারা, নৈতিকতা, শিক্ষাব্যবস্থা ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা। তার লেখা বইগুলো শিক্ষার্থী, গবেষক ও ধর্মপ্রাণ পাঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যাপক গোলাম আযমের জীবনী pdf
অধ্যাপক গোলাম আযম এর জীবনবৃত্তান্ত বা জীবনী PDF নিচের তথ্যগুলো আপনার কাজে লাগতে পারে
-
«অধ্যাপক গোলাম আযমের সংগ্রামী জীবনী» নামে একটি PDF রয়েছে। (bjilibrary.info)
-
তাঁর জীবনবৃত্তান্ত সংক্ষেপে একটি লেখা রয়েছে, যেখানে তাঁর রাজনৈতিক ও শিক্ষাজীবনের সারাংশ তুলে ধরা হয়েছে। Jamaat-e-Islami
-
অধ্যাপক গোলাম আযমের সংগ্রামী জীবনী” PDF ফাইল। xeroxtree.com
আপনি এই লিংক থেকে ডাউনলোড করতে পারেন (অবশ্যই কপিরাইট বা শেয়ারিং নীতিমালা যাচাই করে)।
অতএব জীবনী বা লেখা ব্যবহারের সময় উৎসের নির্ভরযোগ্যতা, উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
গোলাম আযমের জীবনী সম্পর্কে প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন: গোলাম আযম কখন জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ৭ নভেম্বর ১৯২২
প্রশ্ন: গোলাম আযম কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ঢাকার লক্সমীবাজার
প্রশ্ন: গোলাম আযমের পিতার নাম কী?
উত্তর: মাওলানা গোলাম কবীর
প্রশ্ন: গোলাম আযমের মাতার নাম কী?
উত্তর: সায়েদা আশরফুন্নিসা
প্রশ্ন: গোলাম আযমের পরিবার কেমন ছিল?
উত্তর: ধর্মীয় শিক্ষিত ও প্রথাগত
প্রশ্ন: গোলাম আযম কোন মাদ্রাসায় শিক্ষা গ্রহণ করেন?
উত্তর: কুমিল্লার হুচ্ছা মিয়া হাই মাদ্রাসা
প্রশ্ন: গোলাম আযম বিশ্ববিদ্যালয়ে কী বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন?
উত্তর: আরবী, ইংরেজি ও রাজনৈতিক বিজ্ঞান
প্রশ্ন: গোলাম আযম কখন BA পাশ করেন?
উত্তর: ১৯৪৬
প্রশ্ন: গোলাম আযম কখন MA Political Science সম্পন্ন করেন?
উত্তর: ১৯৪৮
প্রশ্ন: গোলাম আযম বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন পদে নির্বাচিত হন?
উত্তর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক
প্রশ্ন: গোলাম আযম কখন DUCSU সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন?
উত্তর: ১৯৪৭–৪৮ এবং ১৯৪৮–৪৯
প্রশ্ন: গোলাম আযম কোন বিষয়ে শিক্ষকতা করেন?
উত্তর: রাজনৈতিক বিজ্ঞান
প্রশ্ন: গোলাম আযম কোন কলেজে অধ্যাপক ছিলেন?
উত্তর: রংপুরের কারমাইকেল কলেজ
প্রশ্ন: গোলাম আযম কোন রাজনৈতিক দলের নেতা ছিলেন?
উত্তর: জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ
প্রশ্ন: গোলাম আযম কখন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমীর হন?
উত্তর: ১৯৬৯ থেকে ২০০০
প্রশ্ন: গোলাম আযমের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে বিতর্কিত সময় কোনটি?
উত্তর: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়
প্রশ্ন: গোলাম আযমের বিরুদ্ধে কোন আদালত ব্যবস্থা হয়েছিল?
উত্তর: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT)
প্রশ্ন: গোলাম আযমকে কখন গ্রেফতার করা হয়?
উত্তর: ২০১২
প্রশ্ন: গোলাম আযমকে কত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়?
উত্তর: ৯০ বছর
প্রশ্ন: গোলাম আযম কখন মারা যান?
উত্তর: ২৩ অক্টোবর ২০১৪
প্রশ্ন: গোলাম আযম কোথায় মারা যান?
উত্তর: ঢাকার বাঙবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে
প্রশ্ন: গোলাম আযমের বয়স মৃত্যুর সময় কত ছিল?
উত্তর: ৯১ বছর
প্রশ্ন: গোলাম আযমের নাগরিকত্ব কী ছিল?
উত্তর: বাংলাদেশি
প্রশ্ন: গোলাম আযম ছাত্রজীবনে কোন আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন?
উত্তর: বাংলা ভাষা আন্দোলন
প্রশ্ন: গোলাম আযম কোন স্মারকলিপি পেশ করেছিলেন?
উত্তর: বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে
প্রশ্ন: গোলাম আযমের পরিবারের গোড়া কোথায়?
উত্তর: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও গ্রামের ‘মাওলভী বাড়ি’
প্রশ্ন: গোলাম আযম লেখক হিসেবেও পরিচিত কি না?
উত্তর: হ্যাঁ, তিনি ইসলামি ও শিক্ষাবিষয়ক বই লিখেছেন
প্রশ্ন: গোলাম আযম কোন বিষয় নিয়ে বই লিখেছেন?
উত্তর: ইসলাম, নৈতিকতা, শিক্ষাব্যবস্থা ও ধর্মীয় বিষয়
প্রশ্ন: গোলাম আযমের ছাত্রজীবনের বিশেষ কীর্তি কী?
উত্তর: বাংলা ভাষার স্বীকৃতির জন্য আন্দোলন ও DUCSU নেতৃত্ব
প্রশ্ন: গোলাম আযমের মৃত্যুর পর তার রাজনৈতিক পরিচয় কেমন ছিল?
উত্তর: বিতর্কিত, সমালোচনা ও ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ

