ধ্বনি শব্দের অর্থ কি | ধ্বনি কাকে বলে | ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য কি

ধ্বনি হচ্ছে একটি শারীরিক তরঙ্গ, যা বায়ু বা অন্য কোনো মাধ্যমের মধ্যে কম্পন সৃষ্টি করে এবং আমাদের শ্রবণযন্ত্রে পৌঁছায়। এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, যা আমরা প্রতিদিনের জীবনে বিভিন্নভাবে অনুভব করি। ধ্বনি আমাদের চারপাশের পরিবেশের সাথে যোগাযোগের এক অন্যতম মাধ্যম। এর সাহায্যে আমরা কথা বলি, সঙ্গীত শোনি, শব্দের সাহায্যে সংকেত গ্রহণ করি এবং আরও অনেক কিছু। 

ধ্বনির প্রকারভেদ অত্যন্ত বিস্তৃত এবং এটি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সাধারণত ধ্বনিকে শ্রবণযোগ্য ও শ্রবণাতীত ধ্বনির মধ্যে ভাগ করি, কিন্তু এর আরও অনেক ধরনের বিশ্লেষণ করা যায় যেমন কম্পনশক্তি, তরঙ্গদৈর্ঘ্য, এবং তার গতির উপর ভিত্তি করে। এই আর্টিকেলে, আমরা ধ্বনির প্রকৃতি, প্রকারভেদ এবং তার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ধ্বনি শব্দের অর্থ কি, ধ্বনি কাকে বলে, ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য কি

ধ্বনি শব্দের অর্থ কি

ধ্বনি শব্দের অর্থ হলো শব্দ বা আওয়াজ, যা শ্রবণের মাধ্যমে অনুভব করা যায়। এটি কোনো বস্তুর সংঘর্ষ, কণ্ঠস্বর বা কম্পনের ফলে সৃষ্টি হতে পারে। ব্যাকরণের দৃষ্টিতে, ধ্বনি হলো ভাষার সবচেয়ে ছোট একক, যা উচ্চারণযোগ্য এবং যার সাহায্যে শব্দ গঠিত হয়।

উদাহরণ
পাথর পড়ে যাওয়ার ফলে একটি ধ্বনি সৃষ্টি হলো।
"অ" একটি ধ্বনি, যা বাংলা ভাষার মূল বর্ণ।

ধ্বনিতত্ত্ব কাকে বলে

ধ্বনিতত্ত্ব হলো ভাষাবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যা ভাষার মৌলিক একক ধ্বনি নিয়ে আলোচনা করে। এটি মূলত মানুষের মুখগহ্বর থেকে উৎপন্ন ধ্বনির উৎপত্তি, গঠনপ্রক্রিয়া, শ্রবণ এবং ব্যবহার সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে। ধ্বনিতত্ত্বের মাধ্যমে বোঝা যায়—একটি ধ্বনি কীভাবে উচ্চারিত হয়, কোন অঙ্গের সাহায্যে ধ্বনি তৈরি হয়, এবং শ্রোতা কীভাবে সেই ধ্বনিকে গ্রহণ করে।

ধ্বনিতত্ত্বকে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়:
১. উচ্চারণতত্ত্ব (Articulatory Phonetics) – যেটা বিশ্লেষণ করে মানুষ কীভাবে মুখ, জিহ্বা, ঠোঁট ও গলা ব্যবহার করে ধ্বনি সৃষ্টি করে।
২. ধ্বনিগত শ্রবণতত্ত্ব (Auditory Phonetics) – ধ্বনিগুলো শ্রোতার কানে কীভাবে ধ্বনিত হয় তা বিশ্লেষণ করে।
৩. ধ্বনিবিজ্ঞান বা ধ্বনি-বিশ্লেষণ (Acoustic Phonetics) – ধ্বনির তরঙ্গ, কম্পন ও মাত্রা বিশ্লেষণ করে। এটি ভাষা শেখা ও সঠিক উচ্চারণে পারদর্শী হতে সাহায্য করে।

প্রতিধ্বনি কাকে বলে

প্রতিধ্বনি হলো এমন একটি শব্দ বা ধ্বনি, যা কোনো বস্তুতে ধাক্কা খেয়ে আবার ফিরে আসে এবং শ্রোতার কানে পুনরায় শোনা যায়। এটি সাধারণত পাহাড়, গুহা, বড় দেয়াল বা কঠিন স্থানে ধ্বনি প্রতিফলনের ফলে ঘটে। প্রতিধ্বনি শুনতে হলে ধ্বনিটি অন্তত ১৭ মিটার দূরত্বে প্রতিফলিত হতে হয়।

উদাহরণ
পাহাড়ে “হ্যালো” বললে কয়েক সেকেন্ড পর আবার “হ্যালো” শোনা যায়—এটিই প্রতিধ্বনি।

ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে

ধ্বনি হলো ভাষার সবচেয়ে ছোট একক, যা মুখ থেকে উচ্চারিত হয় এবং শ্রবণযোগ্য। এটি স্বর বা ব্যঞ্জন যেকোনো ধ্বনি হতে পারে। ধ্বনির সাহায্যে শব্দ তৈরি হয়। উদাহরণ: , , ইত্যাদি।

বর্ণ হলো সেই চিহ্ন বা প্রতীক, যার দ্বারা ধ্বনিকে লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ, ধ্বনির লিখিত রূপই হলো বর্ণ। বাংলা ভাষায় মোট ৫০টি বর্ণ রয়েছে—যার মধ্যে স্বরবর্ণ ১১টি ও ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টি।

সারাংশ:

  • ধ্বনি: শ্রবণযোগ্য, মুখে উচ্চারিত হয়

  • বর্ণ: লিখিত রূপ, ধ্বনিকে প্রকাশ করে

উদাহরণ:
"ক" একটি ধ্বনি যখন বলা হয়, আর এটি যখন লিখি তখন সেটি বর্ণ।

ঘোষ ধ্বনি কাকে বলে

ঘোষ ধ্বনি হলো সেই ধ্বনি, যেটি উচ্চারণ করার সময় স্বরযন্ত্রে কম্পন হয়। যখন আমরা ঘোষ ধ্বনি উচ্চারণ করি, তখন গলার ভেতরে স্বরতন্ত্রী কাঁপে, ফলে একটি স্পষ্ট কম্পন অনুভব করা যায়।

বাংলা ভাষায় অনেক ব্যঞ্জনধ্বনি ঘোষ ধ্বনি হিসেবে পরিচিত। যেমন: গ, ঘ, জ, ঝ, দ, ধ, ব, ভ ইত্যাদি।

পরীক্ষার জন্য সহজ উপায়:
আপনি হাত গলার ওপর রেখে “গ” বা “জ” বললে স্পষ্টভাবে কম্পন অনুভব করবেন—এটাই ঘোষ ধ্বনি চেনার লক্ষণ।

বিপরীত:
যেসব ধ্বনিতে স্বরযন্ত্রে কম্পন হয় না, সেগুলো অঘোষ ধ্বনি। যেমন: ক, খ, চ, ঠ, ত, প ইত্যাদি।

অল্পপ্রাণ ধ্বনি কাকে বলে

অল্পপ্রাণ ধ্বনি হলো এমন ধ্বনি, যেগুলো উচ্চারণের সময় মুখ দিয়ে খুব কম পরিমাণে বা স্বাভাবিকভাবে বাতাস বের হয়। এই ধ্বনিগুলো উচ্চারণে তেমন চাপ বা জোর লাগে না।

বাংলা ভাষায় বেশ কিছু ব্যঞ্জনধ্বনি অল্পপ্রাণ ধ্বনি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন
ক, গ, চ, জ, ট, ড, ত, দ, প, ব ইত্যাদি।

উদাহরণ:
"ক" ধ্বনিটি উচ্চারণ করলে খুব বেশি বাতাস বের হয় না, তাই এটি অল্পপ্রাণ ধ্বনি।

বিপরীত:
যেসব ধ্বনিতে উচ্চারণের সময় অনেক বেশি বা জোরে বাতাস বের হয়, সেগুলো महाप্রাণ (মহাপ্রাণ) ধ্বনি। যেমন: খ, ঘ, ছ, ঝ, ঠ, ঢ, থ, ধ, ফ, ভ ইত্যাদি।

অবিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে

অবিভাজ্য ধ্বনি হলো এমন একটি ধ্বনি, যা আর ছোট কোনো অংশে ভাগ করা যায় না এবং ভাষার মৌলিক শ্রবণযোগ্য একক হিসেবে কাজ করে। এটি উচ্চারিত হয় একটি নিঃশ্বাসে এবং নিজে নিজেই সম্পূর্ণ ধ্বনি হিসেবে পরিচিত।

বাংলা ভাষায় "অ", "ক", "ত" ইত্যাদি প্রতিটি বর্ণই একটি করে অবিভাজ্য ধ্বনি।

সারাংশ:
অবিভাজ্য ধ্বনি = ভাষার ক্ষুদ্রতম, শ্রবণযোগ্য, আর বিভক্ত করা যায় না এমন ধ্বনি।

উদাহরণ:
"ক" ধ্বনিটি আর ছোট ভাগে বিভক্ত করা যায় না, তাই এটি অবিভাজ্য ধ্বনি।

ধ্বনি নির্দেশক চিহ্নকে কি বলে

ধ্বনি নির্দেশক চিহ্নকে বলা হয় বর্ণ। ধ্বনি হলো শ্রবণযোগ্য শব্দ, আর এই ধ্বনিগুলিকে লেখার জন্য যে প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, তাকে বর্ণ বলা হয়। অর্থাৎ, ধ্বনির লিখিত রূপই হলো বর্ণ

উদাহরণ:
যখন আমরা "ক" ধ্বনিটি উচ্চারণ করি, তা শ্রবণযোগ্য ধ্বনি। আর এটিকে যখন লিখে প্রকাশ করি—তখন "ক" বর্ণটি ধ্বনির প্রতীক হিসেবে কাজ করে।

ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য কি

ধ্বনি এবং বর্ণ-এর মধ্যে মূল পার্থক্য হলো:

  1. ধ্বনি:

    • এটি শ্রবণযোগ্য শব্দের একক।

    • এটি মুখ থেকে উচ্চারিত হয় এবং শোনার মাধ্যমে বুঝতে হয়।

    • ধ্বনির কোনো লিখিত চিহ্ন থাকে না।

    • উদাহরণ: "ক", "গ", "অ"—এগুলো ধ্বনি, যেগুলি উচ্চারণের সময় শোনা যায়।

  2. বর্ণ:

    • এটি ধ্বনির লিখিত রূপ।

    • বর্ণ হলো ধ্বনির চিহ্ন, যা লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

    • প্রতিটি ধ্বনির একটি বা একাধিক বর্ণ থাকতে পারে।

    • উদাহরণ: "ক", "গ", "অ"—এগুলো বর্ণ, যা লিখিতভাবে ধ্বনির প্রতিনিধিত্ব করে।

সারাংশ:

  • ধ্বনি হলো উচ্চারণযোগ্য শব্দের একক, যা শোনা যায়।

  • বর্ণ হলো ধ্বনির লিখিত চিহ্ন, যা লেখায় ব্যবহৃত হয়।

নাসিক্য ধ্বনি তৈরি হয় কিভাবে

নাসিক্য ধ্বনি তৈরি হয় যখন বাতাস নাকের মাধ্যমে বের হয়। অর্থাৎ, মুখের পিচ্ছিল অংশে অবস্থিত নাসিকাগহ্বর থেকে বাতাস বের হয়ে ধ্বনি তৈরি হয়। এই ধ্বনির সময় মুখের অঙ্গগুলি সাধারণত বন্ধ থাকে, এবং নাকের গহ্বরটি প্রধান পথ হয়ে ধ্বনিটি তৈরি হয়।

বাংলা ভাষায় কিছু ব্যঞ্জনধ্বনি নাসিক্য ধ্বনি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন:
ণ, ণ, ন, ম ইত্যাদি।

উদাহরণ:
যখন আমরা "ন" বা "ণ" উচ্চারণ করি, তখন বাতাস নাকের মাধ্যমে বের হয়—এটি একটি নাসিক্য ধ্বনি।

সারাংশ:
নাসিক্য ধ্বনি = যেগুলো নাকের মাধ্যমে বাতাস বের হয়ে উচ্চারণ হয়।

বাংলা ভাষায় মৌলিক ধ্বনি কয়টি

বাংলা ভাষায় মৌলিক ধ্বনি মোট ৩৯টি। এগুলো হলো:

  1. স্বরধ্বনি (Vowel Sounds) – মোট ১১টি:

    • অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, ৠ, ঌ, ৡ, এ

  2. ব্যঞ্জনধ্বনি (Consonant Sounds) – মোট ৩৩টি:

    • ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, ট, ঠ, ড, ঢ, ণ, ত, থ, দ, ধ, ন, প, ফ, ব, ভ, ম, য, র, ল, শ, ষ, স, হ, , ক্ষ

মোট: ১১টি স্বরধ্বনি এবং ৩৩টি ব্যঞ্জনধ্বনি।

এগুলোই বাংলা ভাষার মৌলিক ধ্বনি, যেগুলোর সাহায্যে শব্দ তৈরি হয়।

অ ধ্বনি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম

অ ধ্বনি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম হলো:

  1. স্বরবর্ণ হিসেবে উচ্চারণ:
    "অ" ধ্বনিটি বাংলা ভাষায় একটি স্বরবর্ণ, যা সাধারণত মুখের মাংসপেশী শিথিল রেখে উচ্চারণ করা হয়। এটি মুখ খোলার অবস্থায় উচ্চারণ করতে হয়।

  2. স্বাভাবিকভাবে উচ্চারণ:
    "অ" ধ্বনিটি কোন অতিরিক্ত চাপ বা কঠিন পরিশ্রম ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে উচ্চারিত হয়।

  3. গলার উচ্চারণের প্রয়োজন:
    "অ" উচ্চারণ করতে গলার ভেতরের পেশী কিঞ্চিত কাজ করে, তবে অতিরিক্ত কম্পন সৃষ্টি হয় না।

  4. সামঞ্জস্যপূর্ণ উচ্চারণ:
    "অ" ধ্বনি অন্য কোনো ধ্বনির সাথে মিল রেখে স্বচ্ছ এবং স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করা উচিত।

  5. মুখের অবস্থা:
    "অ" ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখ খোলামেলা রাখতে হয় এবং জিহ্বা পিছনের দিকে থাকে। এটি সাধারণত সোজা ভাবে এবং স্থির অবস্থায় উচ্চারণ করা হয়।

উদাহরণ:
"অ" ধ্বনি দিয়ে যেমন শব্দ গঠন হয়, তেমনি এটি বাংলা ভাষার প্রতিটি শব্দে মূল অবস্থানে থাকে।

এ ধ্বনি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম

এ ধ্বনি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম হলো:

  1. মুখের আকার:
    "এ" ধ্বনি উচ্চারণ করার সময় মুখ খোলা থাকে, তবে এটি অধিক খোলা না হয়ে একটুখানি সংকুচিত অবস্থায় থাকে।

  2. জিহ্বার অবস্থান:
    "এ" ধ্বনিটি উচ্চারণ করতে জিহ্বার আগের অংশ উপরের তলপেতে ছোঁয়, তবে খুব বেশি চাপ লাগে না।

  3. স্বাভাবিকভাবে উচ্চারণ:
    "এ" ধ্বনি উচ্চারণ করার সময় কোন অতিরিক্ত জোর বা চাপ দিতে হয় না। এটি স্বাভাবিকভাবে এবং স্পষ্টভাবে উচ্চারিত হয়।

  4. অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যবহার:
    "এ" ধ্বনি উচ্চারণ করতে ঠোঁটের কোনে সামান্য ভাঁজ থাকে, কিন্তু তা খুব বেশি স্পষ্ট নয়।

  5. ধ্বনির ধরণ:
    "এ" ধ্বনি একটি স্বরধ্বনি (vowel sound), যা মূলত স্বরতন্ত্র (vocal cords) থেকে উৎপন্ন হয় এবং উচ্চারণে কম্পন তৈরি হয় না। এটি একটি মৃদু ও প্রাকৃতিক ধ্বনি।

উদাহরণ:
"এ" শব্দের উচ্চারণ যেমন: 'এমন', 'একা', 'এঁকেছে'

প্রশ্নঃ ধ্বনি কি?  

উত্তরঃ ধ্বনি হলো কোনো বস্তুর কম্পনের ফলে উৎপন্ন শব্দ যা কানে শোনা যায়।

প্রশ্নঃ ধ্বনির উৎস কী?  

উত্তরঃ ধ্বনির উৎস হলো কম্পনশীল বস্তু বা পদার্থ যা ধ্বনি সৃষ্টি করে।

প্রশ্নঃ ধ্বনি কিভাবে ছড়ায়?  

উত্তরঃ ধ্বনি তরঙ্গ আকারে বায়ু, জল বা কঠিন মাধ্যমের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রশ্নঃ ধ্বনি শুনতে কী প্রয়োজন?  

উত্তরঃ ধ্বনি শুনতে একটি মাধ্যম, একটি কম্পনশীল উৎস, এবং শ্রবণেন্দ্রিয় প্রয়োজন।

প্রশ্নঃ ধ্বনি কানে কিভাবে পৌঁছে?  

উত্তরঃ ধ্বনি বায়ুর মাধ্যমে কানে পৌঁছে কানের পর্দায় কম্পন সৃষ্টি করে, যা শ্রবণস্নায়ু দিয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছে অনুভূত হয়।

প্রশ্নঃ ধ্বনির তরঙ্গ কী?  

উত্তরঃ ধ্বনির তরঙ্গ হলো লংগিটুডিনাল তরঙ্গ যা কণাগুলোর ঘনত্ব ও প্রশস্ততা পরিবর্তনের মাধ্যমে চলে।

প্রশ্নঃ ধ্বনি কোন ধরনের তরঙ্গ?  

উত্তরঃ ধ্বনি একটি যান্ত্রিক ও লংগিটুডিনাল তরঙ্গ।

প্রশ্নঃ ধ্বনির গতি কীভাবে নির্ধারিত হয়?  

উত্তরঃ ধ্বনির গতি নির্ভর করে মাধ্যমের ধরণ, তাপমাত্রা এবং চাপের উপর।

প্রশ্নঃ বাতাসে ধ্বনির গতি কত?  

উত্তরঃ সাধারণভাবে বাতাসে ধ্বনির গতি প্রায় ৩৪০ মিটার প্রতি সেকেন্ড।

প্রশ্নঃ ধ্বনি কি শূন্য মাধ্যমে চলতে পারে?  

উত্তরঃ না, ধ্বনি শূন্য মাধ্যমে চলতে পারে না; এটি চলার জন্য একটি পদার্থ প্রয়োজন।

প্রশ্নঃ ধ্বনির তীব্রতা কাকে বলে?  

উত্তরঃ ধ্বনির শক্তিকে তীব্রতা বলে, যা ডেসিবেল (dB) এককে পরিমাপ করা হয়।

প্রশ্নঃ ধ্বনির উচ্চতা কী?  

উত্তরঃ ধ্বনির উচ্চতা নির্ধারিত হয় তার কম্পাঙ্ক বা ফ্রিকোয়েন্সি দ্বারা।

প্রশ্নঃ ফ্রিকোয়েন্সি কী?  

উত্তরঃ প্রতি সেকেন্ডে কতবার কম্পন হয়, সেটাই ফ্রিকোয়েন্সি, একক হর্তজ (Hz)।

প্রশ্নঃ মানুষ কত হার্টজ ফ্রিকোয়েন্সির ধ্বনি শুনতে পারে?  

উত্তরঃ সাধারণভাবে ২০ হর্তজ থেকে ২০,০০০ হর্তজ পর্যন্ত ফ্রিকোয়েন্সির ধ্বনি শুনতে পারে।

প্রশ্নঃ ইনফ্রাসাউন্ড কী?  

উত্তরঃ ২০ হর্তজের নিচে যে ধ্বনি মানুষ শুনতে পারে না, তা ইনফ্রাসাউন্ড।

প্রশ্নঃ আল্ট্রাসাউন্ড কী?  

উত্তরঃ ২০,০০০ হর্তজের ওপরে যে ধ্বনি মানুষ শুনতে পারে না, তা আল্ট্রাসাউন্ড।

প্রশ্নঃ কোন তরঙ্গ সবচেয়ে বেশি ধ্বনি পরিবহন করে?  

উত্তরঃ কঠিন মাধ্যমের তরঙ্গ বেশি ধ্বনি পরিবহন করে।

প্রশ্নঃ জলে ধ্বনির গতি কত?  

উত্তরঃ জলে ধ্বনির গতি প্রায় ১৪৮০ মিটার প্রতি সেকেন্ড।

প্রশ্নঃ লোহার মধ্যে ধ্বনির গতি কত?  

উত্তরঃ লোহার মধ্যে ধ্বনির গতি প্রায় ৫০০০ মিটার প্রতি সেকেন্ড পর্যন্ত।

প্রশ্নঃ তাপমাত্রা ধ্বনির গতিকে কিভাবে প্রভাবিত করে?  

উত্তরঃ তাপমাত্রা বাড়লে ধ্বনির গতি বাড়ে, কারণ কণাগুলোর গতি বেড়ে যায়।

প্রশ্নঃ ঘনত্ব কি ধ্বনির গতিকে প্রভাবিত করে?  

উত্তরঃ হ্যাঁ, মাধ্যমের ঘনত্ব বেশি হলে ধ্বনির গতি সাধারণত কমে যায়।

প্রশ্নঃ প্রতিধ্বনি কাকে বলে?  

উত্তরঃ ধ্বনি যখন কোনো শক্ত পৃষ্ঠে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে এবং কানে শোনা যায়, তাকে প্রতিধ্বনি বলে

প্রশ্নঃ প্রতিধ্বনি শুনতে কতটুকু সময় লাগে?  

উত্তরঃ কমপক্ষে ০.১ সেকেন্ডের ব্যবধান থাকতে হয় ধ্বনি ও প্রতিধ্বনির মধ্যে।

প্রশ্নঃ প্রতিধ্বনির জন্য দূরত্ব কত হতে হয়?  

উত্তরঃ অন্তত ১৭ মিটার বা তার বেশি দূরত্ব প্রয়োজন প্রতিধ্বনির জন্য।

প্রশ্নঃ ধ্বনির প্রতিফলন কী?  

উত্তরঃ ধ্বনি যখন কোনো বাধায় আঘাত করে এবং ফিরে আসে, তাকে প্রতিফলন বলে।

প্রশ্নঃ সোনার কী?  

উত্তরঃ সোনার হলো এক ধরনের প্রযুক্তি যা জলে ধ্বনির প্রতিফলন ব্যবহার করে বস্তু শনাক্ত করে।

প্রশ্নঃ সোনারের পূর্ণরূপ কী?  

উত্তরঃ Sound Navigation and Ranging।

প্রশ্নঃ শব্দদূষণ কী?  

উত্তরঃ বিরক্তিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ধ্বনি যা মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি করে তাকে শব্দদূষণ বলে।

প্রশ্নঃ শব্দদূষণের উৎস কী কী?  

উত্তরঃ যানবাহন, কলকারখানা, মাইক্রোফোন, হর্ন, উচ্চ শব্দে গান প্রভৃতি।

প্রশ্নঃ শব্দদূষণ কমাতে কী করা যায়?  

উত্তরঃ শব্দনিরোধক দেয়াল, নিরব এলাকা নির্ধারণ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইন প্রয়োগ।

প্রশ্নঃ কোন তরঙ্গ মানুষের শ্রবণসীমার বাইরে?  

উত্তরঃ ইনফ্রাসাউন্ড ও আল্ট্রাসাউন্ড।

প্রশ্নঃ আল্ট্রাসাউন্ড কোথায় ব্যবহৃত হয়?  

উত্তরঃ চিকিৎসা, শিল্পে ত্রুটি যাচাই, সোনার প্রযুক্তি এবং পশুচিকিৎসায়।

প্রশ্নঃ কুকুর কেমন ধ্বনি শুনতে পারে?  

উত্তরঃ কুকুর ২০ হর্তজ থেকে প্রায় ৪৫,০০০ হর্তজ পর্যন্ত ধ্বনি শুনতে পারে।

প্রশ্নঃ বাদ্যযন্ত্রে ধ্বনি কীভাবে তৈরি হয়?  

উত্তরঃ বাদ্যযন্ত্রে তার, ঝিলি বা বাতাসের কম্পনের মাধ্যমে ধ্বনি তৈরি হয়।

প্রশ্নঃ মানুষের গলার ধ্বনি কীভাবে তৈরি হয়?  

উত্তরঃ কণ্ঠনালিতে অবস্থিত স্বরযন্ত্র কম্পনের মাধ্যমে ধ্বনি তৈরি করে।

প্রশ্নঃ গানের সুরে ভিন্নতা কিসের কারণে হয়?  

উত্তরঃ গানের সুরে ভিন্নতা হয় ধ্বনির কম্পাঙ্ক বা ফ্রিকোয়েন্সির পার্থক্যের কারণে।

প্রশ্নঃ একেই শব্দ বারবার শুনলে কেমন লাগে?  

উত্তরঃ একে শব্দ বারবার শুনলে বিরক্তি, মাথাব্যথা ও মানসিক অস্বস্তি হতে পারে।

প্রশ্নঃ ধ্বনি যদি খুব তীব্র হয় তাহলে কী ক্ষতি হতে পারে?  

উত্তরঃ কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে, এমনকি হৃদপিণ্ডেও প্রভাব ফেলতে পারে

প্রশ্নঃ ধ্বনির সাহায্যে কোন প্রাণী শিকার করে?  

উত্তরঃ বাদুড় ও ডলফিন ধ্বনির প্রতিধ্বনির সাহায্যে শিকার করে।

প্রশ্নঃ ধ্বনি সংরক্ষণ কিভাবে সম্ভব?  

উত্তরঃ রেকর্ডিং ডিভাইস বা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ধ্বনি সংরক্ষণ সম্ভব।

প্রশ্নঃ শব্দ তরঙ্গ কি একমাত্র তরঙ্গ নয় যা শোনা যায়?  

উত্তরঃ হ্যাঁ, শব্দ তরঙ্গই একমাত্র তরঙ্গ যা মানুষ শুনতে পারে।

প্রশ্নঃ মোবাইল ফনে কণ্ঠস্বর কিভাবে পৌঁছে যায়?  

উত্তরঃ কণ্ঠস্বর ধ্বনি আকারে মাইক্রোফোনে গিয়ে বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তরিত হয় এবং তরঙ্গ হিসেবে পৌঁছে যায়।

প্রশ্নঃ ব্যান্ড বাজালে শব্দ বেশি কেন হয়?  

উত্তরঃ একাধিক যন্ত্র একসঙ্গে কম্পন করলে ধ্বনি তীব্র হয়, ফলে শব্দ বেশি হয়।

প্রশ্নঃ স্পিকার থেকে ধ্বনি কিভাবে বের হয়?  

উত্তরঃ স্পিকারের ডায়াফ্রাম কম্পন করে বায়ুকে নাড়া দিয়ে ধ্বনি সৃষ্টি করে।

প্রশ্নঃ শব্দ তরঙ্গকে কীভাবে দেখা যায়?  

উত্তরঃ স্পন্দনরেখা বা অসিলোস্কোপের মাধ্যমে শব্দ তরঙ্গ দেখা যায়।

প্রশ্নঃ কম্পাঙ্ক ও তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সম্পর্ক কী?  

উত্তরঃ কম্পাঙ্ক বাড়লে তরঙ্গদৈর্ঘ্য কমে, আর কমলে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বাড়ে।

প্রশ্নঃ তরঙ্গদৈর্ঘ্য কী?  

উত্তরঃ দুটি পরপর সংকোচনের বা প্রশস্তির মধ্যবর্তী দূরত্বই তরঙ্গদৈর্ঘ্য।

প্রশ্নঃ প্রশস্ততা কাকে বলে?  

উত্তরঃ একটি তরঙ্গের মধ্যবিন্দু থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতা পর্যন্ত দূরত্বকে প্রশস্ততা বলে।

প্রশ্নঃ প্রশস্ততা বেশি হলে কী হয়?  

উত্তরঃ শব্দ তীব্র হয় বা জোরে শোনা যায়।

প্রশ্নঃ প্রশস্ততা কম হলে কী হয়?  

উত্তরঃ শব্দ মৃদু বা নিচু শোনায়।

প্রশ্নঃ কম্পাঙ্ক বেশি হলে ধ্বনি কেমন শোনায়?  

উত্তরঃ উচ্চস্বরে ও তীক্ষ্ণ শোনায়।

প্রশ্নঃ কম্পাঙ্ক কম হলে ধ্বনি কেমন শোনায়?  

উত্তরঃ গম্ভীর ও ভারী শোনায়।

প্রশ্নঃ কোন তরঙ্গ আলো এবং ধ্বনি—দুটিই বহন করতে পারে না?  

উত্তরঃ যান্ত্রিক তরঙ্গ যেমন ধ্বনি, শূন্য মাধ্যমে যেতে পারে না; কিন্তু আলো পারে।

প্রশ্নঃ শব্দ শোষণ কাকে বলে?  

উত্তরঃ কোনো বস্তু যখন ধ্বনি শোষণ করে এবং প্রতিফলিত হতে দেয় না, তাকে শব্দ শোষণ বলে।

প্রশ্নঃ শব্দ প্রতিফলনের ব্যবহার কোথায়?  

উত্তরঃ সোনার, প্রতিধ্বনি পরিমাপ, অডিটরিয়াম ডিজাইন, নৌ-সার্চ ইত্যাদিতে।

প্রশ্নঃ একধরনের ধ্বনি শোনায় “উঁই উঁই” করে, এটি কিসের ধ্বনি?  

উত্তরঃ এটি সাধারণত মশা বা বৈদ্যুতিক যন্ত্রের উচ্চ কম্পাঙ্কের ধ্বনি।

প্রশ্নঃ মৌমাছি কি ধ্বনি উৎপন্ন করে?  

উত্তরঃ হ্যাঁ, মৌমাছির ডানার কম্পন থেকে ধ্বনি সৃষ্টি হয়।

প্রশ্নঃ কোন ধ্বনি পরিবেশকে শান্ত করে?  

উত্তরঃ নরম, সুমধুর, নিম্ন কম্পাঙ্কের ধ্বনি শান্তিময় পরিবেশ তৈরি করে।

প্রশ্নঃ কোন ধ্বনি আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে?  

উত্তরঃ তীব্র, তীক্ষ্ণ, উচ্চস্বরে ও অপ্রত্যাশিত ধ্বনি।

প্রশ্নঃ বধির ব্যক্তি ধ্বনি শুনতে পায় না কেন?  

উত্তরঃ তাদের শ্রবণযন্ত্র বা স্নায়ু সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত থাকায় ধ্বনি পৌঁছালেও অনুভব হয় না।

প্রশ্নঃ কানে অতিরিক্ত শব্দ ঢুকলে কী হয়?  

উত্তরঃ শ্রবণক্ষমতা ক্ষয়, মাথাব্যথা, মেজাজ খারাপসহ মানসিক চাপ বাড়ে।

প্রশ্নঃ ধ্বনি কি বাউন্স করতে পারে?  

উত্তরঃ হ্যাঁ, প্রতিফলনের মাধ্যমে ধ্বনি বাউন্স করতে পারে।

প্রশ্নঃ আমরা কিভাবে বুঝি ধ্বনি কোথা থেকে আসছে?  

উত্তরঃ দুই কানে ধ্বনির সময় ও তীব্রতার পার্থক্য বিশ্লেষণ করে মস্তিষ্ক উৎস নির্ধারণ করে।

প্রশ্নঃ নিরব ঘরে হঠাৎ শব্দ হলে বেশি কেন শোনা যায়?  

উত্তরঃ কারণ নিরব ঘরে অন্য ধ্বনি না থাকায় শব্দ স্পষ্টতরভাবে কানে পৌঁছে।

প্রশ্নঃ জোরে কথা বলা ও চিৎকার—দুটোর ধ্বনির পার্থক্য কী?  

উত্তরঃ জোরে কথা বলায় উচ্চতা বাড়ে, চিৎকারে তীব্রতা ও ফ্রিকোয়েন্সি হঠাৎ বেড়ে যায়।

প্রশ্নঃ শব্দের গুণমান নির্ভর করে কিসের উপর?  

উত্তরঃ কম্পাঙ্ক, প্রশস্ততা ও ধ্বনির বিশুদ্ধতার উপর।

প্রশ্নঃ শ্রুতিসীমা কী?  

উত্তরঃ মানুষের শোনার সক্ষমতা—২০ Hz থেকে ২০,০০০ Hz।

প্রশ্নঃ শ্রুতির বাইরে শব্দ কীভাবে জানা যায়?  

উত্তরঃ যন্ত্রপাতি বা প্রাণীর প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে।

প্রশ্নঃ ধ্বনি কি ধরা যায়?  

উত্তরঃ না, ধ্বনি ধরা যায় না; এটি অনুভব ও রেকর্ড করা যায়।

প্রশ্নঃ শব্দ তরঙ্গ কি একমুখী?  

উত্তরঃ না, শব্দ তরঙ্গ সবদিকে ছড়াতে পারে।

প্রশ্নঃ মাইক্রোফোন কিভাবে কাজ করে?  

উত্তরঃ এটি ধ্বনিকে বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তর করে।

প্রশ্নঃ ধ্বনি ছাড়া কি যোগাযোগ সম্ভব?  

উত্তরঃ হ্যাঁ, ইশারায় বা লিখিত ভাষায় যোগাযোগ সম্ভব।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url