অব্যয় কি | অব্যয় কাকে বলে | অব্যয় কত প্রকার ও কি কি

অব্যয় বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা বাক্যে নিজে কোনো পরিবর্তন না ঘটিয়ে অন্য শব্দের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে বা বাক্যের অর্থ স্পষ্ট করে তোলে। অব্যয় শব্দগুলো নির্দিষ্টভাবে কোনো লিঙ্গ, বচন বা ক্রিয়ার কাল নির্দেশ করে না, বরং তারা বাক্যের গঠন ও ভাব প্রকাশে সহায়ক হয়। যেমন: "এখানে", "তবে", "কেননা", "যদি" ইত্যাদি অব্যয় বাক্যে যুক্ত হয়ে অর্থ স্পষ্ট করে। অব্যয়ের সঠিক ব্যবহার একজন ভাষা ব্যবহারকারীর বাক্য নির্মাণ ক্ষমতা ও ব্যাকরণ জ্ঞানের পরিপক্বতা প্রকাশ করে। এই প্রবন্ধে আমরা অব্যয় কী, এর প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণসহ বিস্তারিত আলোচনা করব।

অব্যয় অর্থ কি

অব্যয় শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো “যা ব্যয় হয় না” বা “যার কোন পরিবর্তন হয় না”। বাংলা ব্যাকরণে অব্যয় হলো এমন এক ধরনের শব্দ, যা বাক্যে ব্যবহৃত হলেও তার রূপে কোনো প্রকার পরিবর্তন ঘটে না। এটি নাম, সর্বনাম, ক্রিয়া কিংবা বিশেষণের মতো নয় — কারণ এই ধরনের শব্দগুলো ব্যাকরণিক নিয়ম অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। কিন্তু অব্যয় সব সময় একই রূপে থাকে এবং বাক্যে অন্য শব্দের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে বা বাক্যের অর্থকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।

উদাহরণস্বরূপ, “তখন”, “এখন”, “যদি”, “কারণ”, “অতএব”, “তবুও”, “কেননা” ইত্যাদি অব্যয় শব্দ বাক্যে সময়, কারণ, ফলাফল, শর্ত ইত্যাদি বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। অব্যয় নিজে কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা কাজ বোঝায় না, তবে বাক্যের অর্থপ্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য অব্যয়কে ব্যাকরণের একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়।

অব্যয় এর ইংরেজি কি

ব্যাকরণে একে indeclinable word বা indeclinable part of speech বলা হয়। কারণ, এই ধরনের শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হলেও কোনো inflection বা grammatical change (যেমন: tense, number, gender ইত্যাদি) হয় না। English grammar-এ অব্যয় সাধারণত adverbs, conjunctions, prepositions, এবং interjections এর মতো নির্দিষ্ট শ্রেণির শব্দের সঙ্গে তুলনীয়।

অব্যয় কত প্রকার ও কি কি

অব্যয় বাংলা ব্যাকরণের একটি অপরিবর্তনীয় শব্দ, যা বাক্যে ব্যবহৃত হলেও তার রূপে কোনো প্রকার পরিবর্তন ঘটে না। অব্যয় নিজের কোনো স্বাধীন অর্থ প্রকাশ না করে বাক্যে অন্যান্য শব্দ বা পদাংশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে, বাক্যের ভাবকে স্পষ্ট করে তোলে। অব্যয়কে চারটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। নিচে প্রতিটি প্রকারের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো:

১. ক্রিয়া অব্যয়

এই ধরনের অব্যয় মূলত ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজের ধরন, সময়, স্থান, অবস্থা বা পরিমাণ বোঝায়। এগুলো সাধারণত কখন, কোথায়, বা কিভাবে প্রশ্নের উত্তর দেয়।
উদাহরণ: আজ, কাল, এখন, তখন, এখানে, ওখানে, ধীরে, দ্রুত, বারবার, খুব, অনেক ইত্যাদি।
ব্যবহার: সে আজ স্কুলে যাবে। / তুমি ধীরে কথা বলো।

২. সম্বন্ধ অব্যয়

সম্বন্ধ অব্যয় এমন অব্যয়, যা বাক্যে পদ বা শব্দগুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট সম্পর্ক স্থাপন করে। এটি সাধারণত কার জন্য, কোন উদ্দেশ্যে, কার সঙ্গে, কোথায় ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর দেয়।
উদাহরণ: জন্য, প্রতি, মতো, সঙ্গে, দ্বারা, কাছে, উপর, নীচে ইত্যাদি।
ব্যবহার: মায়ের জন্য উপহার এনেছি। / বইটি টেবিলের উপর রাখা আছে।

৩. সমুচ্চয় অব্যয়

সমুচ্চয় অব্যয় দুটি বা ততোধিক শব্দ, পদ কিংবা বাক্যাংশকে যুক্ত করে একত্রে প্রকাশ করে। এটি সাধারণত সমন্বয় বা বিরোধ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ: এবং, ও, অথবা, কিন্তু, যদিও, তবুও, তবে, অথচ ইত্যাদি।
ব্যবহার: রুমানা এবং সামিরা বন্ধু। / সে ভালো ছাত্র, কিন্তু অলস।

৪. নিপাত অব্যয়

নিপাত অব্যয় এমন এক ধরনের অব্যয়, যা বাক্যে আবেগ, জোর, ভঙ্গি, বা বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে। এরা সাধারণত বাক্যের শুরু বা শেষে ব্যবহৃত হয় এবং একে “অব্যয় নিপাত” বা “নিপাতন অব্যয়”ও বলা হয়।
উদাহরণ: হ্যাঁ, না, কি, তো, রে, ওরে, আহা, বাহ, হে, ওহো ইত্যাদি।
ব্যবহার: আহা! কী সুন্দর দৃশ্য! / তুমি তো অনেক ভালো লিখো।

এই চার প্রকার অব্যয় বাংলা ভাষার ব্যাকরণগত সৌন্দর্য ও গঠনকে সমৃদ্ধ করে। অব্যয়ের যথাযথ ব্যবহার একজন লেখক বা বক্তার ভাষা দক্ষতা ও বোধের পরিচয় বহন করে।