অধ্যাদেশ কি | অধ্যাদেশ বলতে কি বুঝায় | অধ্যাদেশ জারি করেন কে

একটি দেশের শাসনব্যবস্থায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর আইন প্রণয়নের জন্য সংসদীয় পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। তবে কখনো কখনো রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে বা সংসদ অধিবেশন না চলাকালে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন দেখা দেয়। ঠিক এই ধরনের পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি একটি বিশেষ ক্ষমতাবলে অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন। এটি হলো এমন এক সাংবিধানিক ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সংসদ ছাড়াই সাময়িকভাবে একটি আইন কার্যকর করা সম্ভব হয়।

অধ্যাদেশ হচ্ছে একটি অস্থায়ী আইন, যা সংসদের বাইরে কার্যকর হলেও, এর রয়েছে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ ও সীমাবদ্ধতা। রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি এই অধ্যাদেশ জারি করে থাকেন, কিন্তু এর পেছনে কার্যকর উদ্যোগ ও প্রস্তাবনা দিয়ে থাকেন মন্ত্রিপরিষদ। সংবিধানে নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী, সংসদ পুনরায় অধিবেশনে বসলে অধ্যাদেশটি অনুমোদন পেলে তা স্থায়ী আইনে পরিণত হয়, অন্যথায় নির্দিষ্ট সময় শেষে এটি বাতিল হয়ে যায়।

অধ্যাদেশ ব্যবস্থা একদিকে যেমন প্রশাসনিক গতিশীলতা ও জরুরি পরিস্থিতিতে আইন প্রণয়নের দ্রুত পন্থা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তেমনি এটি কখনো কখনো নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার অপব্যবহার বা সংসদীয় পদ্ধতির বাইরের হস্তক্ষেপ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। ফলে অধ্যাদেশ নিয়ে সব সময়ই রয়েছে আলোচনার বিষয় এবং রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক গুরুত্ব।

অধ্যাদেশ কি

অধ্যাদেশ হলো একটি অস্থায়ী আইন বা আইনসমমানের নির্দেশ, যা সংসদীয় পদ্ধতি অনুসরণ না করেই জারি করা হয়। এটি মূলত তখনই প্রণীত হয়, যখন সংসদের অধিবেশন চলছে না কিন্তু রাষ্ট্রের স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে কোনো আইন প্রণয়নের প্রয়োজন দেখা দেয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যদি সংসদের কোনো অধিবেশন না থাকে এবং পরিস্থিতি এমন হয় যে, রাষ্ট্রপতির মতে অবিলম্বে কোনো কার্য বা আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, তখন তিনি একটি অধ্যাদেশ জারি করতে পারবেন। এটি একটি নির্বাহী ক্ষমতা, কিন্তু তা সাংবিধানিক সীমার মধ্যেই ব্যবহৃত হয়।

অধ্যাদেশ বলতে কি বুঝায়

অধ্যাদেশ বলতে বোঝায় এমন একটি আইনগত নির্দেশ বা আদেশ, যা সংসদ ছাড়াই জারি হয় এবং একে অস্থায়ী আইন হিসেবেও গণ্য করা হয়। এটি একটি বিশেষ সাংবিধানিক উপায়, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ সংসদের অনুমোদন ছাড়াই অস্থায়ী আইন কার্যকর করতে পারে। অধ্যাদেশের বৈশিষ্ট্য হলো – এটি কেবল তখনই জারি করা যায় যখন সংসদের অধিবেশন নেই, এটি অস্থায়ী এবং এর নির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে, এবং এটি সংসদে পেশ না করলে বা অনুমোদন না পেলে এক নির্দিষ্ট সময় পরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যায়।

অর্থাৎ, এটি এক ধরনের জরুরি প্রতিকার ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত না হয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে পারে।

অধ্যাদেশ জারি করেন কে

অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি। তবে এটি রাষ্ট্রপতির একক সিদ্ধান্ত নয়। সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অধ্যাদেশ জারি করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকলেও এর পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করে মন্ত্রিপরিষদ। মন্ত্রিপরিষদের সুপারিশ ও পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করেন। এখানে রাষ্ট্রপতি মূলত সাংবিধানিক কর্তব্য পালন করেন এবং নির্বাহী বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন।

যেমন

ধরুন দেশে হঠাৎ করে কোনো জাতীয় সংকট দেখা দিল এবং সংসদের অধিবেশন নেই। তখন সরকার যদি মনে করে দ্রুত একটি আইন প্রয়োজন, তাহলে মন্ত্রিপরিষদ তা অনুমোদন দিয়ে রাষ্ট্রপতির নিকট পাঠাবে, এবং তিনি অধ্যাদেশ জারি করবেন।

এটি সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে উপস্থাপন করতে হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংসদের অনুমোদন না পেলে তা বাতিল হয়ে যায়।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url