খ্রিস্টপূর্ব কি | খ্রিস্টপূর্ব কাকে বলে | খ্রিস্টপূর্ব বলতে কি বুঝায়
মানব ইতিহাসের বিস্তীর্ণ অধ্যায়ের এক বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে “খ্রিস্টপূর্ব যুগ” বা ইংরেজিতে Before Christ (BC) নামে পরিচিত সময়কাল। এটি এমন এক যুগ, যখন পৃথিবী আজকের মতো আধুনিক ছিল না, কিন্তু মানব সভ্যতা তখনই তার ভিত্তি নির্মাণ করতে শুরু করেছিল।
খ্রিস্টপূর্ব কি
খ্রিস্টপূর্ব মানব ইতিহাসের এই সময়টি ছিল সভ্যতার শেকড় গড়ে ওঠার যুগ। তখন মানুষ ধীরে ধীরে শিকার ও সংগ্রহের জীবন থেকে বেরিয়ে কৃষি, বসতি স্থাপন ও সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তখন জন্ম নেয় মহান সব সভ্যতা যেমন মিশরীয়, মেসোপটেমীয়, সিন্ধু, চৈনিক ও গ্রিক সভ্যতা।
খ্রিস্টপূর্ব মানে কি
খ্রিস্টপূর্ব মানে খুবই সহজ, এই সময়েই মানুষ প্রথম লিখন-পদ্ধতি, বিজ্ঞান, দর্শন, ধর্ম ও শিল্পকলার সূচনা ঘটায়। অনেক মহান রাজা, দার্শনিক ও চিন্তাবিদের আবির্ভাব ঘটে, যারা পরবর্তী যুগের জ্ঞান ও সংস্কৃতির ভিত্তি স্থাপন করেন। ইতিহাসবিদরা “খ্রিস্টপূর্ব” সময়কালকে মানব সভ্যতার প্রাথমিক যুগ হিসেবে উল্লেখ করেন, কারণ এখান থেকেই আধুনিক সমাজ ও সভ্যতার যাত্রা শুরু হয়।
খ্রিস্টপূর্ব শব্দের অর্থ কি
যিশু খ্রিস্টের জন্মের আগে যে সময়কাল, সেটিকে খ্রিস্টপূর্ব বলা হয়। অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব হলো সেই সময়কাল যা খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিস্টের জন্মের পূর্ববর্তী সময়কে নির্দেশ করে।
খ্রিস্টপূর্ব বলতে কি বুঝায়
খ্রিস্টপূর্ব বা Before Christ (BC) বলতে বোঝায় যিশু খ্রিস্টের জন্মের আগে সময়কালকে। এটি মানব সভ্যতার প্রাচীনতম যুগগুলোর একটি, যেখানে মানুষ শিকার, সংগ্রহ ও কৃষি থেকে বেরিয়ে বসতি স্থাপন, সমাজব্যবস্থা ও রাজনীতি গড়ে তোলে। খ্রিস্টপূর্ব যুগে গড়ে ওঠে মিশরীয়, মেসোপটেমীয়, সিন্ধু, চৈনিক ও গ্রিক সভ্যতার মতো মহান সভ্যতা। এই সময় মানুষ লিখন-পদ্ধতি, বিজ্ঞান, দর্শন, ধর্ম, শিল্প ও স্থাপত্যের ভিত্তি স্থাপন করে। খ্রিস্টপূর্ব যুগের বিভিন্ন আবিষ্কার ও সভ্যতার উন্নতি পরবর্তী যুগের মানব সমাজ ও সংস্কৃতির পথ তৈরি করেছে। তাই খ্রিস্টপূর্ব যুগ শুধু অতীত নয়, এটি আমাদের সভ্যতার মূল ভিত্তি ও ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
খ্রিস্টাব্দ ও খ্রিস্টপূর্ব পার্থক্য কি
মানব ইতিহাসকে বোঝার জন্য সময়কে বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খ্রিস্টপূর্ব (BC) এবং খ্রিস্টাব্দ (AD)। “খ্রিস্টপূর্ব” বলতে বোঝায় যিশু খ্রিস্টের জন্মের পূর্ববর্তী সময়কাল, আর “খ্রিস্টাব্দ” হলো যিশু খ্রিস্টের জন্মের পরে সময়কাল। এই দুই সময়কাল ইতিহাস, সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং প্রাচীন ঘাটনা বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
খ্রিস্টপূর্ব কিভাবে গণনা করা হয়
খ্রিস্টপূর্ব (BC) সময় গণনার পদ্ধতি বোঝার জন্য নিচের ব্যাখ্যা সহ উদাহরণ দেওয়া হলো
-
মূল নীতি:
খ্রিস্টপূর্ব (Before Christ, BC) মানে যিশু খ্রিস্টের জন্মের পূর্ববর্তী বছর। তাই যত বড় BC-এর সংখ্যা, সময়কাল তত প্রাচীন। -
গণনার নিয়ম:
-
খ্রিস্টপূর্ব ১ সাল হলো যিশু খ্রিস্টের জন্মের ঠিক এক বছর আগে।
-
BC বছরগুলো উল্টো ক্রমে গোনা হয়। উদাহরণস্বরূপ:
-
খ্রিস্টপূর্ব ১০০ সাল → খ্রিস্টপূর্ব ১ সাল পর্যন্ত সময়কাল কমে আসে।
-
BC 1000 → খ্রিস্টপূর্ব 1 এর দিকে এগিয়ে আসে।
-
-
-
BC ও AD একসাথে ব্যবহার:
-
খ্রিস্টপূর্ব ১ সালের পরেই খ্রিস্টাব্দ ১ শুরু হয়।
-
খ্রিস্টপূর্বের বছর যত বড়, তার মানে তত প্রাচীন ঘটনা।
-
উদাহরণ:
-
যদি একটি ঘটনা BC 500 সালে ঘটেছিল, তাহলে এটি যিশু খ্রিস্টের জন্মের 500 বছর আগে হয়েছিল।
-
BC 300 সাল → BC 200 → BC 100 → BC 1 → AD 1 → AD 100 …
এভাবে ধারাবাহিকভাবে সময় এগোয়।
খ্রিস্টপূর্ব সম্পর্কে জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
খ্রিস্টপূর্ব বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ খ্রিস্টপূর্ব বলতে যিশু খ্রিস্টের জন্মের আগের সময়কালকে বোঝানো হয়।
খ্রিস্টপূর্বের ইংরেজি রূপ কী?
উত্তরঃ Before Christ (BC)।
খ্রিস্টাব্দ এবং খ্রিস্টপূর্ব — এই দুইয়ের পার্থক্য কী?
উত্তরঃ খ্রিস্টপূর্ব হলো যিশুর জন্মের আগে সময়, আর খ্রিস্টাব্দ হলো যিশুর জন্মের পরের সময়।
মানব সভ্যতার সূচনা কোন যুগে হয়েছিল?
উত্তরঃ খ্রিস্টপূর্ব যুগেই মানব সভ্যতার সূচনা হয়েছিল।
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা কোন সময়কালীন?
উত্তরঃ খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৩০০০ সালের দিকে মিশরীয় সভ্যতার সূচনা হয়।
সিন্ধু সভ্যতা কখন বিকশিত হয়েছিল?
উত্তরঃ খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২৫০০ সালে।
গ্রিক সভ্যতা কোন যুগের অন্তর্ভুক্ত?
উত্তরঃ খ্রিস্টপূর্ব যুগের অন্যতম মহান সভ্যতা ছিল গ্রিক সভ্যতা।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে মানুষের প্রধান পেশা কী ছিল?
উত্তরঃ কৃষি ও শিকার।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে কোন কোন সভ্যতা সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিল?
উত্তরঃ মিশরীয়, মেসোপটেমীয়, সিন্ধু, চৈনিক ও গ্রিক সভ্যতা।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে লিখন-পদ্ধতি কে আবিষ্কার করে?
উত্তরঃ মেসোপটেমীয়রা কিউনিফর্ম লিপি আবিষ্কার করে।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে প্রথম চাকা কে তৈরি করে?
উত্তরঃ মেসোপটেমীয়রা প্রথম চাকা তৈরি করেছিল।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে পিরামিড নির্মাণ কোন দেশে হয়েছিল?
উত্তরঃ মিশরে।
খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৬ সালে কোন বিখ্যাত সম্রাট জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তরঃ আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট।
খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ সালে কোন দার্শনিকদের সময় ছিল?
উত্তরঃ সক্রেটিস, প্লেটো ও এরিস্টটল।
খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ সালে কোন ধর্মের উদ্ভব হয়?
উত্তরঃ বৌদ্ধ ধর্মের উদ্ভব হয় গৌতম বুদ্ধের মাধ্যমে।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে চীনের প্রথম সম্রাট কে ছিলেন?
উত্তরঃ চিন শি হুয়াং।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে ভারতের প্রথম সাম্রাজ্য কোনটি ছিল?
উত্তরঃ মগধ সাম্রাজ্য।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে মিশরের রাজধানী কী ছিল?
উত্তরঃ মেমফিস ও থিবস ছিল প্রধান রাজধানী।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে মানুষ প্রথম ধাতু ব্যবহার করে কবে?
উত্তরঃ খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৪০০০ সালে তামা ব্যবহার শুরু হয়।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে কৃষির সূচনা কোথায় হয়েছিল?
উত্তরঃ নীল নদ ও টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস নদীর তীরে।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে লিখিত আইন প্রথম কোথায় প্রণীত হয়?
উত্তরঃ ব্যাবিলনীয়দের হামুরাবি কোডে।
হামুরাবি কে ছিলেন?
উত্তরঃ খ্রিস্টপূর্ব যুগের ব্যাবিলনের রাজা ও আইন প্রণেতা।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে পিরামিড কেন নির্মিত হতো?
উত্তরঃ রাজাদের সমাধি হিসেবে।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে মিশরীয়রা কোন দেবতাদের পূজা করত?
উত্তরঃ সূর্যদেব রা, ওসিরিস, আইসিস প্রভৃতি দেবতাকে।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় ছিল?
উত্তরঃ ভারতে তক্ষশিলা ও নালন্দা ছিল প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে প্রথম গণতন্ত্র কোথায় প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ গ্রিসের এথেন্সে।
খ্রিস্টপূর্ব ৪৯ সালে রোমান সাম্রাজ্যের নেতা কে ছিলেন?
উত্তরঃ জুলিয়াস সিজার।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে প্রথম অলিম্পিক কোথায় অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ গ্রিসের অলিম্পিয়া নগরে।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে গ্রিসের বিখ্যাত দার্শনিক কারা ছিলেন?
উত্তরঃ সক্রেটিস, প্লেটো ও এরিস্টটল।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে বিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের উন্নয়ন কোথায় বেশি হয়েছিল?
উত্তরঃ গ্রিস ও মিশরে।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে লিপির বিকাশ কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
উত্তরঃ তথ্য সংরক্ষণ ও যোগাযোগ সহজ করার জন্য।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে সবচেয়ে প্রাচীন লিপি কোনটি?
উত্তরঃ কিউনিফর্ম লিপি।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে কাগজের ব্যবহার প্রথম কোথায় শুরু হয়?
উত্তরঃ প্রাচীন চীনে।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে স্থাপত্যকলায় সবচেয়ে উন্নত দেশ কোনটি ছিল?
উত্তরঃ মিশর।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে চিকিৎসাবিদ্যার প্রাথমিক ধারণা কোথায় জন্ম নেয়?
উত্তরঃ মিশর ও ভারত।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে প্রাচীন ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনগুলো ছিল?
উত্তরঃ তক্ষশিলা ও নালন্দা।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন কখন?
উত্তরঃ খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ সালে।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে কনফুসিয়াসের জন্ম কোথায়?
উত্তরঃ চীনে, খ্রিস্টপূর্ব ৫৫১ সালে।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে প্রথম রাজা কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালের দিকে।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে যুদ্ধের অস্ত্র কেমন ছিল?
উত্তরঃ প্রধানত তামা, ব্রোঞ্জ ও লোহার অস্ত্র ব্যবহৃত হতো।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে ধর্মীয় বিশ্বাস কেমন ছিল?
উত্তরঃ বহুদেবতা বা প্রকৃতিপূজার প্রচলন ছিল।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে নারী সমাজের অবস্থা কেমন ছিল?
উত্তরঃ পুরুষ প্রধান সমাজ হলেও কিছু সভ্যতায় নারীর সম্মান ছিল।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে স্থাপত্যের বিখ্যাত নিদর্শন কী?
উত্তরঃ গিজার মহা পিরামিড।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে নদী কেন সভ্যতার কেন্দ্র ছিল?
উত্তরঃ কৃষি, পানি ও পরিবহনের সুবিধার জন্য।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে সময় মাপার পদ্ধতি কেমন ছিল?
উত্তরঃ সূর্য ও চাঁদের চলন দেখে সময় নির্ধারণ করা হতো।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে শিক্ষা কেমন ছিল?
উত্তরঃ মুখস্থ ও মৌখিক শিক্ষার প্রচলন ছিল।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে শিল্পকলার সূচনা কোথায় হয়েছিল?
উত্তরঃ গুহাচিত্র ও মাটির মূর্তি তৈরির মাধ্যমে।
খ্রিস্টপূর্ব যুগে মানুষ কেমন পোশাক পরত?
উত্তরঃ পশুর চামড়া, তুলা ও সুতির কাপড়ের পোশাক পরত।
খ্রিস্টপূর্ব যুগ ইতিহাসে কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তরঃ এই যুগেই মানব সভ্যতা, সংস্কৃতি ও জ্ঞানের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল।
খ্রিস্টপূর্ব যুগ মানব সমাজকে কী শিক্ষা দেয়?
উত্তরঃ এটি আমাদের শেখায় কিভাবে মানুষ প্রাচীন সময় থেকে উন্নতির পথে এগিয়ে এসেছে।
